দ্বিতীয় মমতা সরকারের জনপ্রিয় প্রকল্প 'দিদিকে বলো'।
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির নিয়ম, বিধি, সময়, সব কিছুই বেঁধে দেওয়া হয়েছে আগেভাগেই। কোন তৃণমূল নেতা কবে, কখন, কোথায়, যাবেন, সঙ্গে কে কে থাকবেন তাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কোন বুথে নিশিযাপন করতে হবে, তা-ও বলে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সেই নিয়ম বেড়াজাল ভাঙতে চেয়েছিলেন অনেকেই। কার্যত ‘ফাঁকি’ দিয়েই কাজ সারার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তার জো নেই। খবর ঠিক পৌঁছে গিয়েছে পিকে-র দপ্তর তথা প্রশান্ত কিশোরের সংস্থায়। কোনও কোনও জনপ্রতিনিধি নিশিযাপন না করেই বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এলাকা ছাড়ার আগেই পিকে-র দপ্তর থেকে ফোন গিয়েছে সংশ্লিষ্ট নেতার কাছে। জবাবদিহি করতে হয়েছে নিশিযাপন না করেই এলাকা ছাড়ার পরিকল্পনা করায়। আবার কেউ নির্দিষ্ট বুথের বিশিষ্টদের বাড়িতে যাননি। সেই খবরও পৌঁছে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
পিকে-র দপ্তরের কড়া নজরদারিতে কার্যত থরহরিকম্প দশা তৃণমূল নেতাদের। কর্মসূচিতে কোনওরকম নড়চড় করার সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুরু হয়েছে বিধায়কদের মাধ্যমে। তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ থেকে শুরু করে অন্য বিধায়করা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট বুথে গিয়ে এই কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই কয়েকজন এই কর্মসূচি কাটছাঁট করতে চেয়েছিলেন। তা করতে গিয়েই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে পিকে-র দপ্তরের ফোন চলে আসায়। এক বিধায়ক বলেন, “বাড়িতে একটা জরুরি কাজ থাকায় নিশিযাপন করব না ভেবেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ফোন চলে এল। ওরা কীভাবে জেনে গেল, বুঝতে পারছি না। কী আর করব রাতে থাকতেই হল।” আর এক তৃণমূল নেতা বলেন, “নির্ধারিত সঙ্গীকেই নিয়ে যেতে হচ্ছে। একজনের বিশেষ কাজ থাকায় আমার সঙ্গে কর্মসূচিতে যেতে পারেননি। তার কাছেও ফোন চলে যায়। কিছুক্ষণ পরেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে কর্মসূচিতে যোগ দিতে।”
কিন্তু কারা খবর দিচ্ছে পিকে-র দপ্তরে? এই নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও শুরু জোর চর্চা। বিধায়ক বা নেতারা যাঁদের নিয়ে কর্মসূচি করছেন সেখানেই রয়েছেন পিকে-র কর্মচারীরা। কর্মসূচির বিষয়ে খুঁটিনাটি সব তথ্যই তাঁদের মাধ্যমে পৌঁছচ্ছে পিকের দপ্তরে। প্রতি বুথের খুঁটিনাটি বিষয়ে সব থেকে বেশি তথ্য রাখেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএলও বা বুথ লেভেল অফিসার। যিনি মূলত ভোটার তালিকা ও ভোটার কার্ড সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে থাকেন চুক্তির ভিত্তিতে। তাঁরা মূলত শাসকদলেরই লোকজন। তাই তাঁদের কাছেই না কি এই কর্মসূচির বিষয়ে খোঁজ নিতে ফোন আসছে পিকে-র দপ্তর থেকে। এক বিএলও বলেন, “কী করব ফোন করে সব জানতে চাইছে পিকে-র দপ্তর থেকে। না বলে উপায়ও নেই। রাজনীতিটাও তো করতে হয়। না শুনলে দলের ক্ষতি হবে। নিজেরও রাজনীতি করাটা নাও হতে পারে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, “দলের নির্দেশ মেনে সকলকেই কাজ করতে হবে। নড়চড় করলে দল তো খোঁজ নেবেই। ব্যবস্থাও নিতে পারে সবকিছু ঠিকঠাক না করলে। মূল উদ্দেশ্য জনসংযোগ। মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনা, তাঁদের পাশে থাকা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.