শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) ঘিরে জল্পনায় নাটকীয় মোড়। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে ‘শহিদ স্মরণে’ সমাবেশের মঞ্চ থেকে ভাষণে দল এবং নেত্রীর কথা একবারও উচ্চারণ করেননি রাজ্যের পরিবহণ, সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। কিন্তু তার একদিন পর বৃহস্পতিবার ঘাটালে বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে সেই শুভেন্দুর ভাষণেই উঠে এল ‘দল’ ও ‘নেত্রী’র কথা। এদিনই কাঁথিতে শিশির অধিকারীর বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) তথা পিকে। তবে শুভেন্দু ওইসময় বাড়িতে ছিলেন না।
ঘাটালের সঙ্গে নিজের যোগাযোগ মেলে ধরতে গিয়ে ভাষণে এদিন শুভেন্দু বলেন, “২০১১ সালে রাজ্যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের দলের নেত্রীর নেতৃত্বে যে লড়াই হয়েছিল, সেই লড়াইয়ে দলের বিধায়ক প্রার্থীর হাত ভেঙে দিয়েছিল সিপিএম। সেই সময় কাঁথির বাড়ি থেকে ঘাটালের লক্ষ্মণপুর গ্রামে ছুটে এসেছিলাম। সেই প্রার্থীর চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছিলাম আমি। আমি ঘাটালের মানুষের পাশে আছি, ছিলাম, থাকব।” তাঁর দল ছাড়া নিয়ে চরম জল্পনার মাঝেই এদিন ভাষণে এভাবে শুভেন্দুর দল ও নেত্রীর প্রসঙ্গ টানা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিকমহল। অন্যদিকে, শুভেন্দুর ছবি-সহ জেলায় জেলায় ‘দাদার অনুগামী’ বলে পোস্টার পড়ার ধারাবাহিকতায় এবার অন্য উজান। শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশে ‘দল ছেড়ে যেও না’ বলে এবার পোস্টার পড়ল দক্ষিণ বারাসত-সহ বেশ কিছু এলাকায়। তবে বুধবার রাতে বিহার ভোটে জয় উপলক্ষে নন্দীগ্রামে আয়োজিত বিজেপির মিছিল ও সভায় ‘শুভেন্দু অধিকারী দলে এলে স্বাগত’ বলেও দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা মন্তব্য করেন। নন্দীগ্রামে শহিদ স্মরণ মঞ্চ থেকে দলের নাম না করে শুভেন্দুর কটাক্ষে ভরা ভাষণ ও একইদিনে তৃণমূলের পালটা সভা ঘিরে রাজ্য-রাজনীতি রীতিমতো সরগরম হয়ে ওঠে। শুভেন্দু অধিকারীর দল ছাড়ার জল্পনা রীতিমতো তুঙ্গে ওঠে।
এই পরিস্থিতিতে ভিড়ে ঠাসা ঘাটালের সভায় তিনি আবার কী বলেন, তা নিয়ে আগ্রহ ছিল চরমে। সেই ভাষণেই দল ও নেত্রীর প্রসঙ্গ পেড়ে তাঁকে ঘিরে জল্পনায় শুভেন্দু নয়া ইন্ধন দিলেও বলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এদিন নিজেকে ‘পান্তাভাত খাওয়া, মাটিতে বসা তৃণমূল স্তরের কর্মী’ বলে উল্লেখ করে পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য আরও বলেন, “শুভেন্দু ছাত্রাবস্থা থেকে ঘাটালের সঙ্গে ছিল, আছে থাকবে। চরৈবেতি, চরৈবেতি মন্ত্রে এগোব। অন্যরা দেখবে আর জ্বলবে।” তবে তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশেই যে ১০ বছর আগে ঘাটালের পুরভোটে বাড়ি বাড়ি প্রচারে তিনি এসেছিলেন তাও এদিন প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন শুভেন্দু। বৃহস্পতিবার ঘাটাল শহরের বিদ্যাসাগর হাইস্কুল মাঠে দাসপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে শুভেন্দু বলেন, “আমি নীচে বসা কর্মী, তৃণমূল স্তরের কর্মী। আমার উপর আপনাদের আস্থা আছে তো?” উপস্থিত জনতা তখন হাত তুলে সমস্বরে সমর্থন জানায় তাঁকে। বক্তব্যের অন্তিম পর্বে সেই নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ টেনেই শুভেন্দু বলেন, “ভারতের স্বাধীনতা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। তারও আগে ১৯৪২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নন্দীগ্রাম তমলুকে তাম্রলিপ্ত সরকার গঠন করেছিলেন সতীশ সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়রা। একটা সরকার ২৩৫ এর গরম দেখিয়েছিল, তার কী হাল হয়েছে তা আপনারা জানেন। নন্দীগ্রাম থেকেই তার পতনের সূচনা। মাথা নত করেনি মেদিনীপুরের মানুষ, এটা মনে রাখতে হবে। সেই নন্দীগ্রামই পথ দেখাবে রাজ্যকে।” জল্পনার কেন্দ্রে থাকা পরিবহণমন্ত্রীর এই বক্তব্যও ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.