ছবিটি প্রতীকী
অভিরূপ দাস, নয়াদিল্লি: রুগ্ন হাড় জিরজিরে। দু’মুঠো খাবারও জোটে না। অপুষ্টিতে বেঁকে গিয়েছে শরীর। এমন শিশু ক্রমশ কমছে বাংলায়। অপুষ্টিতে দেশ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, এমনই বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে দিল্লিতে ভারতে নিযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের কান্ট্রি ডিরেক্টর বিশো পারাজুলি জানিয়েছেন, অপুষ্টিতে শিশুমৃত্যু কমছে বাংলায়।
সারা দেশে অস্বাভাবিক কম ওজনের শিশু জন্মানোর হার যেখানে ২১.৪ শতাংশ, বাংলায় এই হার অনেকটাই কম, ২০.৮ শতাংশ। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়ের শরীরে সঠিক পুষ্টি না হওয়াতেই কম ওজনের শিশুর জন্ম হয়। অনেক অন্তঃসত্ত্বার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকে। প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারা পর্যাপ্ত খাদ্য পান না। অপুষ্টির কারণে রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হন। আবার অনেকে নানা রোগে ভুগেও অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হন। সেই সমীক্ষাতেও যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে কলার উঁচু হচ্ছে এ রাজ্যের। গুজরাতে যেখানে প্রতি একশো জন মহিলার মধ্যে ৬০.১ জন রক্তাল্পতায় ভুগছেন বাংলায় সে সংখ্যাটা ৫৭।
জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে অনেকক্ষেত্রে বাংলার গড় গোটা দেশের থেকে ভাল। অপুষ্টি থেকে নানান সমস্যা হয়। তার একটি ‘চাইল্ড স্টান্টিং’-অর্থাৎ বয়সের তুলনায় শিশুর উচ্চতা কম। দেশের ৩৯.৩ শতাংশ পাঁচ বছর বয়সি শিশুর বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা। এ রাজ্যে সে সংখ্যাটা ৩২ শতাংশ। সম্প্রতি এ বিষয়ে সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ‘ল্যান্সেট’ জার্নালে।
সারা দেশ জুড়েই চালানো হয়েছে স্বাস্থ্য সমীক্ষা। সেই সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে ভয়ংকর ছবি। এখনও দেশের কোটি কোটি শিশু দুর্বল-রুগ্ন হয়ে বেড়ে উঠছে। দেখা গিয়েছে জন্মের প্রথম ১০০০ দিনে সঠিক পুষ্টি না পেলে শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি বিশো পারাজুলির কথায়, শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রথম ১০০০ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তার মধ্যেই মস্তিষ্কের ৮৬ শতাংশ বিকাশ হয়ে যায়। এই সময় মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ না হলে পরবর্তীকালে সমস্যায় পড়তে পারে শিশুটি। রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি টোমিও সিচিরি জানিয়েছেন, অপুষ্টি অনেক সময়ই শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কীভাবে এর বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব? আপাতত ফর্টিফায়েড রাইসকেই হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখনও গ্রামাঞ্চলে ভাতই প্রধান খাদ্য। চালের সঙ্গে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান মিশ্রণে তৈরি ‘ফর্টিফায়েড রাইস’ বা পুষ্টি সমৃদ্ধ চালের মাধ্যমেই আগামিদিনে দেশের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তাঁরা।
তবে একথা সকলেই স্বীকার করেছেন, গত দশ বছরে উন্নতি করেছে দেশ। শুদ্ধ পানীয় জল, পর্যাপ্ত খাদ্য শস্য অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করতে পারে। তবে শেষের তথ্যটি চিন্তার– অপুষ্টিতে ভোগা যত শিশু এই বিশ্বে বাস করে তার প্রতি তিনটি শিশুর একটি বাস করে এই ভারতেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.