ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কেন্দ্র বিদেশ থেকে পোলট্রির খাবার আমদানি করলেও মুরগির মাংসের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। তাই সমস্যা মেটাতে এবার রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ পোলট্রি ব্যবসায়ীরা। বস্তুত, এখন জোড়া সংকটে রাজ্যের পোলট্রি ব্যবসা। একদিকে বাড়ছে চিকের দাম, একইসময়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পোলট্রির খাবারের দাম। ফলে গত ছ’মাসে খোলাবাজারে মুরগির মাংসের দাম কার্যত আকাশছোঁয়া।
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় এখন পোলট্রি মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি পিছু ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। শুধু কলকাতাই বা কেন, গোটা রাজ্যেই খোলাবাজারে মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে। এই সমস্যার জন্য ভুট্টার তীব্র আকালকেই দায়ী করেছেন পোলট্রি ব্যবসায়ীরা। রাজ্যের বৃহত্তম পোলট্রি ব্যবসায়ী সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে ফলন ভাল হলেও খেতে পোকা লাগায় উৎপাদিত ভুট্টার সিংহভাগ নষ্ট হয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চও এই সমস্যার কথা মেনে নিয়েছে। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যের ছোট ও মাঝারি পোলট্রি ব্যবসায়ীরা।
পোলট্রি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে চলিত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, সমস্যা মেটাতে বিদেশ থেকে ভুট্টা আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু সেই ভুট্টা আনতে হবে ম্যাঙ্গালোর ও বিশাখাপত্তনম বন্দর থেকে। রাজ্যে চলতি বছরে শুধুমাত্র মুরগির খাবারের জন্য অন্তত ৫০ লক্ষ টন ভুট্টা দরকার। কিন্তু অন্য রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তৎপরতা শুরু করেছে। এই অবস্থা্য় যে সামান্য পরিমান মুরগির খাবার পাওয়া যাবে তাতে পড়তায় পোষাবেনা ব্যবসায়ীদের। পোলট্রি ফেডারেশনের পক্ষে মদন মাইতি এদিন বলেন, “এই দুই বন্দর থেকে পোলট্রির খাবারের জন্য ভুট্টা সংগ্রহ করতে গেলে পরিবহণ খরচ নিয়ে অন্তত কেজি পিছু ২০-২২ টাকা বেশি দাম পড়বে। এই অবস্থায় সমস্যা মেটাতে খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে পোলট্রি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নবান্নে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মদন মাইতি। মদনবাবুর দাবি, “ভুট্টার জোগান স্বাভাবিক না হলে খোলা বাজারে মুরগির মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণ করা রীতিমতো সমস্যা। কারণ, উৎপাদন খরচই উঠছে না।”
পোলট্রির খাবারের যেমন দাম বাড়ছে, তেমনই একদিনের একটি মুরগির বাচ্চার দামেও খোলাবাজারে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। তথ্য বলছে ৩৫-৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। খোলাবাজারে মুরগির মাংসের দাম বাড়লেও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর কিন্তু এখনও ১৪০ টাকা কেজি দরে প্যাকেটজাত মুরগির মাংস বিক্রি করছে। দপ্তরের তথ্য বলছে, বছরে ২২ লক্ষ ব্রয়লার মুরগির দরকার হয় চাহিদা মেটাতে। এই চাহিদা মেটাতে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরকেও ভরসা করতে হয় বেসরকারি পোলট্রিগুলির উপর। তবে এখনই প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর মুরগির মাংসের দাম বাড়াচ্ছে না। দপ্তরের অধিকর্তা ডঃ গৌরীশংকর কোনার বলেছেন, “গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.