Advertisement
Advertisement
Potato

ভিন রাজ্যে সাদা ‘জ্যোতি’, উত্তরে দামি লাল ‘হল্যান্ড’-এর! ব্যাপারটা কী?

আলু নিয়ে চলছে দেদার ফাটকাবাজি!

Potatoes from North Bengal exported in differents states causing price hike

ফাইল ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 13, 2024 9:31 pm
  • Updated:July 14, 2024 11:06 am  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: চড়া দামে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে সাদা ‘জ্যাতি’ প্রজাতির আলু। উত্তরে বাড়ছে দাম চড়ছে লাল ‘হল্যান্ড’ আলুর। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীদের একাংশ বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে ফাটকা কারবার শুরু করে। তাই হিমঘরে পর্যাপ্ত মজুত সত্ত্বেও এখানে আলু মহার্ঘ্য হয়েছে। এদিকে যখন অন্য সবজি অগ্নিমূল্যের জন্য ছুয়ে দেখার সাহস খুঁজে পাচ্ছেন না নিম্নবিত্তের সাধারণ মানুষ তখন আলুর দাম বেড়ে চলায় তাদের মাথায় হাত পড়েছে। ক্রমশ ক্ষোভের পারদ চড়ছে।

ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরের সাদা ‘জ্যোতি’ প্রজাতির আলু শুধুমাত্র ভিন রাজ্যে যায়। গত দু’বছর উত্তরের আলু (Potato) তেমন যায়নি বললেই চলে। এক ট্রাক আলুর দাম নেমেছিল ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায়। এবার বর্ষায় হঠাৎ ভিন রাজ্যে উত্তরের সাদা আলুর চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলায় লটারি প্রাপ্তির মতো দশা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। ইতিমধ্যে ট্রাক প্রতি আলুর দাম ৬ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে। কৃষকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দুবছর আলুর দাম তেমন মেলেনি। তারা এক ট্রাক আলুর দাম পেয়েছেন ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। তিন বিঘায় ১০০ কুইন্টাল আলু উৎপাদন হয়। সেটাই ২০০ প্যাকেট বন্দি হয়ে একটি ট্রাকে যায়। ওই আলুর বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তিনবিঘায় খরচ হয় ৯০ হাজার টাকা। অথচ গত দু’বছর ৬০ হাজার টাকা দাম মেলায় চোখে দেখা ৩০ হাজার টাকা লোকসানে দিশাহারা দশা হয় তাদের।

Advertisement

[আরও পড়ুন: খোপায় পদ্ম, আম্বানিবধূর পোশাকে রূপকথার গল্প আঁকলেন বাঙালি শিল্পী জয়শ্রী বর্মন]

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে কৃষকরা খেতের আলু খেতেই ফেলে রাখেন। কারণ, একবিঘা জমির আলু তুলতে খরচ হয় প্রায় পাচ হাজার টাকা। আলু বিক্রি করে খরচ ওঠেনি। কিন্তু এবার বর্ষায় হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরের সাদা আলু মহার্ঘ্য হতে বসেছে। কেজি প্রতি দাম আসাম ও বিহারে মিলছে ২৪ টাকা। কিন্তু ওই লাভ কৃষকরা পাবে না। কারণ, তাদের আলু কিনে হিমঘরজাত করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ, তারাই এখন ফাটকা কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন!

কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে (North Bengal) প্রায় দেড় লক্ষ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায়। এটাই মূলত উত্তরের আলু চাষের বলয়। জলপাইগুড়িতে আলু চাষের এলাকা প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর। আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর। কোচবিহারে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর এবং উত্তর দিনাজপুরে প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের দাবি, ওই আলু চাষের বলয়ে যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়ে থাকে সেটা উত্তরের ষাটটি হিমঘরে মজুত করা যাবে না। সেখানে ২০ লক্ষ টন আলু মজুতের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে তার দ্বিগুণ আলু উৎপাদন হয়। তাই অর্ধেক আলু ভিন রাজ্যের বাজারে পাঠাতে না পারলে হিমঘরে ‘ঠাঁই নেই’ দশা হতে বাধ্য।

গত দুবছর ভিন রাজ্যে আলু যায়নি, তাই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি হয়েছিল। যে কারণে দাম নেমেছিল। এদিকে গত মরশুমে আলু উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। তাই হিমঘরে ১৫ লক্ষ টনের মতো মজুত রয়েছে। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, “এবার বর্ষায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল তো বটেই। বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং দক্ষিণবঙ্গেও উত্তরের সাদা আলুর চাহিদা বেড়েছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।” তিনি জানান, শুধুমাত্র ধূপগুড়ি থেকে দৈনিক ৬০ গাড়ি আলু ভিন রাজ্যে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে প্রতিদিন দেড়শো ট্রাক আলু বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতি গাড়িতে ৩০ টন আলু থাকে। দাম ৬ লক্ষ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি, বাইরে আলু পাঠানো শুরু হতে বাজার চাঙ্গা হয়েছে। তাই দাম বেড়েছে।

[আরও পড়ুন: সড়ক পথে কাঁটার পর বন্ধ বিমান পরিষেবাও, বৃষ্টি-ধসে বিচ্ছিন্ন সিকিম]

কিন্তু তাই বলে লাল ‘হল্যান্ড’ প্রজাতির আলুর কেজি প্রতি দাম ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় চড়বে?জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং এলাকার আলু চাষি নিত্যানন্দ বর্মন অভিযোগ করেন, চাষিদের কাছ থেকে জলের দরে আলু কিনে ব্যবসায়ীদের একাংশ এভাবেই ফাটকা কারবারে মেতে চারগুণ লাভ তুলে নিচ্ছেন। মরছে সাধারণ মানুষ। শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি এলাকার আলু চাষি সুবোধ দাস প্রশ্ন তুলেছেন, বাইরে যাচ্ছে সাদা জ্যোতি প্রজাতির আলু। উত্তরবঙ্গের বাজারে সেটা চলে না। এখানে চাহিদা বেশি লাল আলুর। সেটার দাম কেন বাড়বে! আলু ব্যবসায়ী মহলে ওই প্রশ্নের যুক্তিপূর্ণ উত্তর মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মুখ খোলেননি জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর বিপ্লব দাস এবং জেলা কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement