ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: শুধু শীতের সবজিই নয়। পতন শুরু হয়েছে আলুর দামেও! তাই প্রমাদ গুনছেন ব্যবসায়ীরা। সমস্যায় চাষিরাও। আশঙ্কা, নতুন আলু বিক্রি করে লাভের মুখ নাও দেখতে পারেন তাঁরা। তাই পুরো ডিসেম্বর মাস হিমঘর না খোলার দাবি জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দাবি করেছেন পরিবহন ভরতুকিরও।
পাইকারি বাজার ঘুরে মধ্যবিত্ত গেরস্থের ব্যাগে এই সেদিনও আলু ছিল রীতিমতো দামী! জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ১৮-২২ টাকা কেজি দরে। আর কুলীন চন্দ্রমুখী বিক্রি হয়েছে ২২-২৪ টাকা কেজিতে। কিন্তু নভেম্বরের শুরুতেই গোটা রাজ্যে আলুর দাম দ্রুত পড়তে শুরু করে। গত কয়েকদিনে কলকাতার খুচরো বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ১৪-১৭ টাকা কিলো দরে। আগামী কয়েকদিনে দাম আরও খানিকটা কমতে পারে বলে আশঙ্কা। আর এই ঘটনায় বেকায়দায় চাষি থেকে ব্যবসায়ী।
আলু ব্যবসায়ীদের হিসেব বলছে রাজ্যের ৪৫০ টি হিমঘরে এখনও মজুত রয়েছে ২৪ লক্ষ মেট্রিকটন আলু। এরমধ্যে ৭-১০ লক্ষ মেট্রিকটন বীজের জন্য বরাদ্দ। বাকি ১৬-১৪ লক্ষ মেট্রিকটন আলু ফেলে ছড়িয়ে খেলেও আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই গোটা ডিসেম্বর মাস আলু হিমঘরে মজুত রাখার দাবি জানিয়েছে আলু ব্যবসায়ী সংগঠন। সংগঠনের আরও দাবি, আলু বিক্রির জন্য সরকারকে পরিবহণ ভরতুকিরও দিতে হবে। আগামিকাল মঙ্গলবার, কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন আলু ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকরা। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষে লালু মুখোপাধ্যায় বলছেন, “৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত একই ভাড়ায় হিমঘরে আলু রাখা ও পরিবহণ ভরতুকির দাবি জানানো হবে সরকারের কাছে।”
গত বছর রাজ্যে ৯০ লক্ষ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন হয়। আর এই বছর উৎপাদন হয়েছে ১০০ লক্ষ মেট্রিকটন। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব বা হিমাচল প্রদেশেও আলুর উৎপাদন তুঙ্গে। তাই ভিনরাজ্যে আলু রপ্তানির সম্ভাবনা কমছে। এই অবস্থায় মার্চ মাসেই রাজ্যের ৪৫০টি হিমঘরে প্রায় ৭০ লক্ষ মেট্রিকটন আলু রাখা হয়। আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের বক্তব্য, গত মে থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫৬ লক্ষ মেট্রিকটন আলু বেরিয়েছে রাজ্যের বাজারগুলিতে। এখনও যে বিশাল পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে তা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু হিমঘরে রাখতে দিতে হবে। গত কয়েক দিনে পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ৫৫০ টাকায়। তবে চন্দ্রমুখীর পাইকারি ও খুচরো বাজারে তেমন ওঠানামা হয়নি। কৃষিবিপণন দপ্তর সূত্রে খবর, গত বছরও ব্যবসায়ী ও হিমঘর সংগঠনের দাবি মেনে দু’দফায় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমঘর বন্ধ রাখার অনুমতি দেয় রাজ্য। পাইকারি ও খুচরো বাজারের পাশাপাশি আলুর বন্ডের দামও গত আট মাসে কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত মার্চের তুলনায় ৫০ কেজি বস্তার বন্ডের দাম
কমেছে অন্তত ২৫০ টাকা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.