রিন্টু ব্রহ্ম ও ধীমান রায়: কাটমানি ফেরতের দাবিতে এবার বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার ঘিরে সরগরম কালনা৷ নাম জুড়ল পুরসভার চেয়ারম্যানেরও৷ সোমবার সকালে কালনা শহরের যোগীপাড়ায় অন্তত সাত, আটটি পোস্টার চোখে পড়ে সকলের৷ কোনওটিতে লেখা, ‘কালনা পুরসভার বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কাউন্সিলর, পৌরপতি ও বিধায়কের খাওয়া কাটমানি অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। নইলে পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে৷’ নিচে লেখা – ভারতীর জনতা পার্টি। আবার কোনও পোস্টারে লেখা, ‘গরিবের থেকে নেওয়া কাটমানির টাকা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।’ এরকমই নানা পোস্টার ছেয়ে গিয়েছে শহরের আনাচে-কানাচে। এনিয়ে পালটা সরব হয়েছে তৃণমূল৷ তাঁদের দাবি, বিজেপি কালনার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। কালনায় বিজেপি কোনও আন্দোলন করতে পারেনি। তাই রাতের অন্ধকারে এসব পোস্টার দিয়েছে৷ মিথ্যে অভিযোগ করছে।
এই মুহূর্তে বর্তমানে কালনা পুরসভা তৃণমূলের দখলে। দেবপ্রসাদ বাগই রয়েছেন চেয়ারম্যানের আসনে। আবার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুও গত আট বছর ধরে এখানকার জনপ্রতিনিধি৷ তিনি একসময়ে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। কালনার তৃণমূলের সংগঠন ও জনপ্রতিনিধি হিসাবে প্রশাসনিক ক্ষমতার বেশিরভাগটাই নিয়ন্ত্রণ করেন এই দু’জন৷ তাঁদের নেতৃত্বে কালনায় একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। তবে সরকারি স্তরে কোনও কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ আগে কখনও সোনা যায়নি। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যজুড়ে কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভের জেরে এঁদের দু’জনের বিরুদ্ধেও পোস্টার ঘিরে শোরগোল পড়েছে কালনার রাজনৈতিক মহলে।
এই পোস্টার নিয়ে সরব হয়েছেন বিধায়ক এবং পুর চেয়ারম্যান। কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘সারা বাংলা জুড়েই কাটমানি নিয়ে যে প্রতিবাদ চলছে, কালনা শহরে বিজেপি নেতারা কিছু করতে না পারায় মিথ্যা পোস্টার দিয়ে সংবাদ শিরোনামে আসার চেষ্টা করছে।’ বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘সত্যিই যদি কাটমানি নিয়ে থাকি, তার তদন্ত হোক। তদন্তে কিছু পাওয়া গেলে আমার শাস্তি হবে৷’ উলটোদিকে, কালনার বিজেপি সুশান্ত পাণ্ডে বলেন, ‘আমাদের দল থেকে এরকম কিছু করা হয়নি। সাধারণ মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। টেট কেলেঙ্কারি করেছে। তাই সাধারণ নাগরিক বিজেপির নাম করে তাঁদের দাবি তুলেছে। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি। এই দাবিকে সমর্থন করি।’
আরেকদিকে, কাটমানি নিয়ে ঝামেলার জেরে সোমবার সন্ধেবেলা রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বর্ধমানের মঙ্গলকোট৷ চলল বোমাবাজি৷ গুরুতর জখম হন পালিগ্রামে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রহিম শেখ৷ প্রথমে তাঁকে মঙ্গলকোট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে ভরতি করা হয়৷ তারপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে৷ তৃণমূলের কার্যালয়ে হামলার পাশাপাশি কয়েকটি বাইকও ভাঙচুর করা হয়৷ ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন দাদা আকবর শেখও৷
আহত রহিম শেখের ছেলে মহিমের কথায়, ‘আমার বাবা কার্যালয়ে বসে থাকার সময় কিছু লোকজন বোমাবাজি করতে করতে জড়ো হয়৷ তারা সকলেই বিজেপি৷ তাদের হাতে লাঠি, রডও ছিল৷ বাবাকে ঘিরে ধরে ব্যাপক পেটায়৷ তারপর ফেলে রেখে বোমাবাজি করতে করতে চলে যায়৷ তবে মঙ্গলকোটে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি সমীর দাসের দাবি, সাধারণ মানুষ কাটমানি ফেরতের জন্য শাসকদলের নেতাদের কাছে অনুরোধ করছিলেন। সকালে কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক নিরীহ গ্রামবাসীকে রহিম শেখের নেতৃত্বে ব্যাপক মারধর করা হয়। তারই প্রতিবাদে গ্রামের সাধারণ মানুষ শান্তি মিছিল বের করেছিল। তখন তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী ফের মিছিলে বোমাবাজি করে। গ্রামের মানুষ প্রতিরোধ করেছেন। এর সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক নেই৷’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.