শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: পুলিশ হেফাজতে মৃত বিজেপি কর্মী অনুপ রায়ের (Anup Roy) দেহের পুনরায় ময়নাতদন্ত হল শনিবার। উত্তর দিনাজপুর জেলা আদালতের নির্দেশে এদিন বেলা আড়াইটা নাগাদ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ময়নাতদন্তের সময় হাজির ছিলেন মৃতের দাদা এবং বিজেপির আইনজীবী-সহ দলের তিন প্রতিনিধি। প্রথমে দেহের সিটি স্ক্যান এবং এক্স-রে করানো হয়। তারপর মর্গে ফের ময়নাতদন্ত (Post mortem) শুরু হয়। ময়নাতদন্তের শুরু থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পুরোপুরি ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। প্রায় আড়াই ঘন্টা ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর বিজেপি কর্মীর দেহ নিয়ে রায়গঞ্জ থেকে ইটাহারের নন্দনগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁর পরিজনেরা।
ময়নতদন্তে হাজির থাকা বিজেপি (BJP) নেতা প্রদীপ সরকারের দাবি, “অনুপ রায়কে প্রথমে লোহার রড কিংবা ভারী জিনিস দিয়ে মারধর করা হয়। মাথায় ও পিছনে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে এলোপাথাড়ি গুলি করা হয়। ময়নাতদন্তে হাতে ও বুকে এবং পশ্চাতে চারটি সেলাই মিলেছে। ওই সব জায়গায় গুলি করা হয়েছিল। তারপর প্রথমবার ময়নাতদন্তে গুলির প্রমাণ লোপাট করতে তড়িঘড়ি গুলি সেলাই করা হয়েছিল। গুলির চিহ্ন মিলেছে। তাছাড়া ময়নাতদন্তে পিছনে বা হাতে সেলাই থাকার কথা নয়। পরিষ্কার গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।” অন্যদিকে, রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জে সিং বলেন,”একাটি ডাকাতির ঘটনার মাস্টার মাইন্ড ছিল অনুপ রায়। এই ঘটনায় ধৃত তিন আসামিকে জেরা করে অনুপের নাম মেলে। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ইটাহার থেকে রায়গঞ্জ থানায় আনা হয়েছিল। কিন্তু তারপর অনুপের মৃত্যু। তবে মৃতের মা গীতারানী রায় রায়গঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
অন্যদিকে, বিজেপির জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী বলেন,”মৃত অনুপের দেহ রায়গঞ্জের দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ ইটাহারে বিজেপির জেলা কার্যকর্তা নিমাই সিংহের একমাত্র ছেলের আকস্মিক বিদ্যুৎপৃষ্ঠে মারা যান। তাই মিছিল হল। তবে থানায় গুলি করে যে অনুপকে হত্যা করা হয়েছিল তা পুনরায় ময়নাতদন্ত পরিষ্কার।” এদিনের ময়নাতদন্তে উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেট রায়গঞ্জের বিডিও রাজু লামা বলেন ” আমি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করব না। যা বলার আদালত জানাবে।”
উল্লেখ্য, বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ইটাহারের দুর্লভপুর পঞ্চায়েতের নন্দনগ্রামের বাড়ি থেকে বাইশ বছরের অনুপ রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ বাইকে তুলে রায়গঞ্জ থানায় নিয়ে আসে। তারপর ওইদিন সন্ধেয় অনুপের মৃত্যু হয়। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত হয়। কিন্তু মৃতের মা ও বিজেপি তরফে পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবি জানান। বৃহস্পতিবার রাতে ইটাহার থানায় এবং রায়গঞ্জ পুলিশ সুপারকে রায়গঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ জানানো হয়। তদন্তকারী পুলিশের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকালে রায়গঞ্জের জেলা মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালত পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.