সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বাঙালির প্রিয় পোস্তর দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। ঘরে ঘরে খাবারের পাতে নিয়মিত প্রিয় পোস্তর পদ পাওয়া এখন বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর পোস্তর দাম নাগালে রাখতে বিকল্প খুঁজে বের করল রাজ্য সরকার।
এবার সরকারি উদ্যোগেই পোস্ত চাষ হবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমতি নিয়ে পোস্ত চাষের উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য। সোমবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এক বাসিন্দা পোস্তর দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরজি জানান। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য মুখ্যসচিব মলয়কুমার দে’কে নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পোস্ত বাংলার সকলেরই প্রিয় খাবার। এখন এত দাম যে মানুষ খেতে পারছেন না। পোস্ত গাছ থেকে আফিমও হয়। তাই সরকারি উদ্যোগে সেই চাষ করা হলে আফিম তৈরির সম্ভাবনা থাকবে না। সেইভাবেই আমরা পোস্ত চাষ করতে পারি।”
তাঁর এই প্রস্তাব শুনে মুখ্যসচিব মলয় দে বলেন, “পোস্ত চাষের জন্য নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর অনুমতি নিতে হয়। আমরা আগে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি খামারে যেখানে অতিরিক্ত জমি রয়েছে সেখানে পোস্ত চাষ করতে চেয়ে আবেদন করেছিলাম। অব্যবহার যাতে না হয়, তা আমরাই দেখতাম। আমরা আবারও সেই উদ্যোগ বলেছি।”
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো ট্র্যাডিশনাল এরিয়ার বাইরে পোস্ত চাষের অনুমতি দেবে না। তবুও তাঁরা ফের উদ্যোগ নেবেন। যাতে রাজ্যে পোস্ত চাষ করে কম দামে তা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া যায়। এদিনের বৈঠকে অন্য রাজ্যে পোস্ত কীভাবে চাষ হয়, সেই প্রশ্নও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপকুমার মজুমদার জানান, মধ্যপ্রদেশ,
রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশেরে কিছু চিহ্নিত জায়গায় অনুমোদন রয়েছে। সেখানেই পোস্ত চাষ হয়। খাদ্যশস্যের বাইরেও চিকিৎসা বা রপ্তানির জন্য যতটা পরিমাণ পোস্ত প্রয়োজন, তা ওইখানেই যথেষ্ট পরিমাণে হয় বলে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থা জানিয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গে পোস্ত চাষ করতে দেওয়া যাবে না বলেও তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন।
একদা শস্যগোলা বলে পরিচিত বর্ধমানে সেচের সমস্যাও রয়েছে। সোমবারের বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনার পর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি ও বাঁকুড়া জেলার একাংশের সেচ ব্যবস্থা উন্নত করতে ২৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ। বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই জেলাগুলির সেচ ব্যবস্থা উন্নত হবে। পাশাপাশি, বন্যা নিয়ন্ত্রণও করা যাবে। এর মাধ্যমে সেচখালগুলি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হবে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, সেচসেবিত এলাকা বাড়িয়ে তোলা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলার জন্যই এই প্রকল্পে খরচ করা হবে ৫৬০ কোটি টাকা। এই জেলার জামালপুর ব্লকের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৬০
কোটি টাকা। বাঁধ সংস্কার হলে বন্যার প্রবণতা কমবে। চলতি খরিফ মরশুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলায় এখনও ৩ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণের কাজ হয়নি। তা যাতে দ্রুত করা যায় তার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.