দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: কচিকাঁচাদের যাতায়াতে একমাত্র ভরসা পুলকার। পোলবা কাণ্ডের পরেও ঘুম ভাঙেনি কর্তৃপক্ষের। বিভিন্ন স্কুলের পুলকারের হাল হকিকত দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। কারণ, কোনও পুলকারের চাকার অবস্থা অত্যন্ত করুণ। আবার কোনও পুলকারের ব্রেক নিয়েও প্রশ্ন থেকেই। একাধিক পুলকারেই গাড়ির সিটের নিচে রয়েছে ব্যাটারি। ঋষভ, দেবাংশুর লড়াই দেখে পুলকারের দুরবস্থা চিন্তা বাড়াচ্ছে অভিভাবকদের। আর কবে পুলকারের দিকে নজর দেবে মালিকরা, সে প্রশ্নই উঠছে বারবার।
আধুনিকতার বেড়াজালে বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারগুলি হয়ে উঠছে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর। একাধিক পরিবারগুলিতে বাবা-মায়েরা দু’জনেই চাকুরিজীবী হওয়ায় তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য নিত্যদিনের ভরসা জোগাতে একমাত্র আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠে এই পুলকারগুলি। হুগলির উত্তরপাড়া থেকে শুরু করে ডানকুনি, হিন্দমোটর, কোন্নগর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, এমনকি খাস কলকাতাতেও পুলকার চালকদের হাতে সন্তানদের ছেড়ে নিশ্চিতে থাকতে চাইলেও রোজের এই দুর্ঘটনা তাদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।অন্যদিকে পুলিশের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের ব্যবসা অবাধে চালাচ্ছেন পুলকার মালিকরা।ফলে অভিভাবকরা চান অবিলম্বে পুলিশ এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।তবে প্রশাসন এখনও এই বিষয়ে উদাসীন থাকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অভিভাবকদের।আর এই উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই হুগলির বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুলকারগুলি।আর অবাধে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
হুগলির একটি স্কুলে গিয়ে সরেজমিনে এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বোঝা যায় খারাপ অবস্থায় রীতিমতো পড়ুয়াদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দুরন্ত গতিতে রোজ যাতায়াত করে এই পুলকারগুলি। হিন্দমোটরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে গিয়ে দেখা গেল ৭০ শতাংশ পুলকারের টায়ারেরই গ্রিপ ক্ষয়ে গিয়ে সমান হয়ে গেছে।তাই গাড়ি চলার সময় হঠাৎ করে ব্রেক কষলে তা বেশ কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে যায়।ফলে এই গাড়ির গতিবেগ দেখে রিকি, সন্দীপদের মত খুদেরা কাকু আস্তে চালাও ভয় করছে বলে চিৎকার করলেও কেউ কেউ আবার বাড়িতে বাবার সঙ্গে মোবাইলে খেলা গেমের স্মৃতি মনে করে গাড়ির কাকুর জন্য গলা ফাটায়।
আবার কোনও গাড়ির সিটের নিচে বিপজ্জনকভাবে রাখা থাকে ব্যাটারি। যা যে কোন সময় ফেটে গিয়ে ঘটতে পারে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা। কোনও গাড়ির দরজা বন্ধ হয় না ঠিক করে বাঁধা থাকে দড়ি দিয়ে। কোনও কারণে সেই গাড়ি দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করলে আর দরজার পাশে উইন্ডো সিটে বসে বাচ্চাটাই যদি আপনার সন্তান হয়? ভেবে দেখেছেন কখনও কী হতে পারে? পুলকারে যাতায়াত করা কিছু পড়ুয়ারা জানায়, কিছু পুলকারের স্পিডমিটারের কাঁটা কাজ করে না।অনেক পুলকারের গায়ে তো আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট।কোনও পুলকারের বয়স ২০ পেরিয়েছে। এই রকম খারাপ পরিস্থতিতে চলা কিছু পুলকারের গায়ে অবশ্য ইংরাজীতে বড় বড় করে লেখা থাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজ্য পরিবহন মন্ত্রকের অনুমোদন প্রাপ্ত।
[আরও পড়ুন: সাংসদ তহবিলের টাকায় স্কুলে সোলার ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসালেন মিমি ]
পুলকার চালকদের ফিটনেস সার্টিফইকেটের কথা জিজ্ঞাসা করলে বেশিরভাগ সময়েই কেউ লাজুক হাসেন কেউ বা বলেন কী করব দাদা পেটের দায়ে রাস্তায় বেরিয়েছি।তবে প্রশ্ন হল নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের হাতে তারা ঠিক কী করছেন?তাদের হাতের ফাঁক গলেই তো ঘটছে এই ধরণের ঘটনা।ইতিমধ্যেই শনিবার হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের তরফ থেকে তারকেশ্বর চাপাডাঙায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশ পুলকার চালকদের সচেতন করেন।পড়ুয়াদের নিয়ে ধীর গতিতে গাড়ি চালানোরও সঙ্গে আইন মেনে চলারও পরামর্শ দেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.