Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lok Sabha 2024

চব্বিশের ভোটে উধাও ‘কিম্ভূত কিমাকার’ থেকে ‘দিদি ও দিদি’ টিটকিরি, বঙ্গে বদল রাজনীতির সমীকরণ?

রাজনীতিবিদদের এই মানোন্নয়ন কি স্বেচ্ছায়? নাকি এর পিছনেও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে?

Political leaders controlled their speech during Lok Sabha 2024 campaign in WB
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:May 30, 2024 9:57 pm
  • Updated:May 30, 2024 9:57 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় রাজনীতি নৈতিকতার সীমা বহু আগেই ছাড়িয়েছে। ২০২১ বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে শালীনতার মাত্রাও সেভাবে বজায় রাখা যায়নি। ব্যক্তি আক্রমণ, অশোভন ভাষার ব্যবহার এবং কুকথার বহরে অতীতের সব নজিরই বোধ হয় টপকে গিয়েছিল একুশ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন সোনালি রেখার মতো। এবারের প্রচারে হয়তো নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘন হচ্ছে, কিন্তু শালীনতা বজায় রাখার কিঞ্চিত চেষ্টা হয়েছে। অন্তত বাংলার নির্বাচনী প্রচারে ব্যক্তি আক্রমণ একুশের স্তরে নেমে যায়নি। সেটা হয়তো খানিক রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্যই।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গ রাজনীতির মান নেমেছিল অন্য স্তরে। খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিক সভায় এসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেভাবে সুর করে ‘দিদি ও দিদি’ বলে টিটকিরি করে গিয়েছেন, যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতুষ্পুত্রকে ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলে বারবার আক্রমণ করে গিয়েছেন, সেটা অন্তত প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোভন ছিল না। আবার বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখে শোনা গিয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে বারমুডা পরানো’ বা ‘রগড়ে দেওয়া’র মতো নিদান। মাস্তানির সুরে ‘পুঁতে দেব’, ‘শবদেহের লাইন লাগিয়ে দেব’র মতো হুমকিও দেওয়া হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী আবার ‘মমতাজ বেগম’, ‘জেহাদি’র মতো শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে। উলটো দিক থেকেও আক্রমণের মাত্রাটা ছিল একইরকম। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে কখনও কিম্ভূত কিমাকার, কখনও হোঁদল কুতকুতের মতো কটূক্তি করেছেন। সমর্থনযোগ্য নয় সেটাও।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সমুদ্রের মাঝে ধ্যানমগ্ন মোদি, ছুঁলেন বিবেকানন্দের ইতিহাস]

বস্তুত একুশের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। তেমনি ব্যক্তি আক্রমণের স্তরও নেমেছিল অনেকটা নিচে। সে তুলনায় চব্বিশের ভোট প্রচার অনেক পরিণত, অনেক সাবলীল এবং অনেক শালীন। চব্বিশের লোকসভায় বাংলায় ২০-২৫টি নির্বাচনী কর্মসূচি করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একবারও, ‘দিদি ও দিদি’র মতো শ্লেষ শোনা যায়নি তাঁর মুখে। এমনকী সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয় এমন কোনও কথা তিনি এবারের প্রচারে বলেননি। মুখ্যমন্ত্রীর নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেষ্টাও করেছেন, সন্দেশখালি, সিএএ, অনুপ্রবেশের মতো ইস্যুকে হাতিয়ার করেছেন। কিন্তু কোনওভাবেই মমতাকে ব্যক্তি আক্রমণের চেষ্টা করেননি। একই কথা প্রযোজ্য অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের ক্ষেত্রেও। এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও এবার সেভাবে ব্যক্তি আক্রমণ শোনা যায়নি। কোনও কোনও সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে হয়তো মেজাজ হারিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোথাও আপনি-আজ্ঞের সম্ভ্রম ভুলে তুই-তোকারিতে নেমেছেন। কিন্তু সেটা কোনওভাবেই একুশের নির্বাচনের মতো ‘কিম্ভূত কিমাকার’ আক্রমণ নয়।

এখন প্রশ্ন হল, আমাদের রাজনীতিবিদদের এই মানোন্নয়ন কি স্বেচ্ছায়? নাকি এর পিছনেও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দ্বিতীয়টিই বেশি সত্য। কারণ, বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তি আক্রমণ করলে যে আদপে লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি, সেটি একুশের নির্বাচনেই বিস্তর বুঝেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। বরাবরের সংস্কৃতি মনস্ক বাঙালি মন যে কোনওভাবেই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী বা যে কোনও মহিলা সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য বা টোন টিটকিরি সইবে না, সেটাও এবার বোধগম্য হয়েছে মোদি-শাহদের। ব্যক্তি আক্রমণের এই ধারা বিজেপির তরফ থেকে যেহেতু শুরু হয়নি, তৃণমূলও এবার ব্যক্তি আক্রমণের স্তরে নামেনি। কারণ একপাশ থেকে নিচুস্তরের ব্যক্তি আক্রমণ হলে বঙ্গ ভোটাররা সেটাও মেনে নেবেন না। অতএব বাধ্যবাধকতা ছিল দু তরফেই। তবে হয়তো শুধু বাধ্যবাধকতা নয়, বঙ্গ রাজনীতির মানোন্নয়ন রাজনেতাদের সুমতির সুফল। নাহলে একই বাধ্যবাধকতা একুশেও ছিল। যা মানেননি দেশের শীর্ষনেতারা। সে তুলনায় এবার মানোন্নয়ন হয়েছে তো বটেই। শরৎচন্দ্র বেঁচে থাকলে আজ নিশ্চয়ই লিখতেন, রামের সুমতি হয়েছে…।

[আরও পড়ুন: ‘দেশ যেন এগিয়ে থাকে’, ভোট উৎসবের অন্তিমলগ্নে বিশেষ বার্তা তৃণমূল ‘সুপারস্টার’ দেবের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement