পলাশ পাত্র, তেহট্ট: অশোভন আচরণের দিন শেষ৷ এবার শুধুই নম্রতা, সৌজন্যমূলক ব্যবহার ভোটপ্রার্থীর৷ কৃষ্ণনগরের বিদায়ী সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে লাগাতার যে ধরনের রূঢ় আচরণের অভিযোগ উঠেছিল, তাতে ইতি টানতেই যেন আরেক প্রার্থী এগিয়ে এসেছেন তাঁর সুন্দর ব্যবহার নিয়ে৷ তিনি কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে৷
সম্প্রতি কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে প্রচারে গিয়েছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে৷ সেখানে তিনি ভোটারদের মন জয় করেছেন বলেই দাবি বিজেপি সমর্থকদের। এই কেন্দ্রে বিজেপি মানেই ভোটারদের কাছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জলু মুখোপাধ্যায়ই একমাত্র নাম৷ সাতাশি বছরের বিখ্যাত আইনজীবীকে দল প্রার্থী না করলেও তিনি একেবারে বটবৃক্ষের মতোই রয়েছেন নতুন প্রার্থীর সঙ্গে। ঠান্ডা মাথার ভারতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার কল্যাণ চৌবে সেই বটবৃক্ষের ছায়ার নিচেই কাজ করছেন৷ কল্যাণ চৌবে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার পর অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে জলু মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীদের ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছে। প্রচারে বেরিয়ে জলুবাবু নিজেও অনুজপ্রতিম কল্যাণের প্রশংসা করেছেন৷সেসব কথা যে ঠিক, ভোটাররাও তেমনই বলছেন৷
তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র দু’ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শহর, গ্রাম, অলিগলিতে প্রচারে ঝড় তুলেছেন। সেদিক থেকে বিজেপির প্রচার কিছুটা পিছিয়ে থেকে শুরু। কিন্তু প্রচারের এক সপ্তাহ পরই বোঝা গেল পারফরম্যান্স৷ ভাল ব্যবহারের জন্য আমজনতার মন কেড়েছেন কল্যাণ। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন প্রাক্তন ফুটবলার। সাতটি বিধাসভা কেন্দ্রে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক সম্পূর্ণ সারা৷ কৃষ্ণনগর, বেথুয়াডহরি, ধুবুলিয়া-সহ একাধিক জায়গার বাজার, হাট, মার্কেট, দোকান বা ব্যস্ততম স্থানে প্রচার শেষ।
দেশের হয়ে বারো বছর ফুটবল খেলেছেন কল্যাণ। বিহার, বাংলা, পঞ্জাব, গোয়া, মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সাতবার সন্তোষ ট্রফি খেলেছেন। শুধু তাই নয়, কল্যাণ চৌবে বিশ্বকাপের কমেন্টটরও। সুরাট, রাঁচি, কলকাতা, সম্বলপুরে ফুটবলের ক্যাম্প চালানো প্রার্থী একজন লেখকও। অর্থাৎ, সব দিক থেকে অত্যন্ত সক্রিয় কল্যাণ চৌবে খুব সহজেই ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। কৃষ্ণনগর মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে দিচ্ছেন, কোথা দিয়ে শট নিলে গোল অবধারিত৷ শেখাচ্ছেন হেড, পাসিংয়ের খুঁটিনাটি৷ তা দেখতে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ছেন পথচলতি সাধারণ মানুষ। শুধু ফুটবলই নয়৷ ভলি, ক্রিকেটেও সমান স্বচ্ছন্দ। নি:সন্দেহে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘আমাদের লোক’ ইমেজটা বেশ গেঁথে দিয়েছেন৷
ভোটারদের বুথমুখী করতে কল্যাণ চৌবে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব নিতে হবে। দোকানিদের বোঝাতে হবে, আধ বেলা দোকান বন্ধ করেও যেন ভোট দিতে যাওয়া হয়৷ গেরুয়া শিবিরের জন্য ভোট চাওয়ার পাশাপাশি ধীরস্থির কল্যাণ চৌবে প্রাক্তনীকেও খোঁচা দিচ্ছেন, কোনওরকম অশালীনতা ছাড়াই৷
তাপস পালকে খোঁচা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘সেদিন দশ বছর পিছিয়ে গিয়েছিল, যেদিন মা, বোনেদের অসম্মান করেছিলেন সাংসদ, নিজেকে ‘মাল’ বলেছিলেন নিজেই৷’ এবার তাই শব্দপ্রয়োগ নিয়ে অতিরিক্ত সাবধানী বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে৷ নিজের কাছেই তাঁর প্রতিজ্ঞা, বাইরে গিয়ে শুনতে যেন না হয়, সাংসদ অশালীন কথা বলেছেন। কল্যাণ চৌবের এমন মার্জিত ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলছে, প্রশংসা হচ্ছে। তাঁর বিনীত, ভদ্র, মার্জিত, নিচু গলায় কথা বলা ভোটারদের মুগ্ধ করেছে। বিরোধী শিবির যদিও এতেও রাজনৈতিক চাল দেখছে৷ পরিকল্পনামাফিক এই ব্যবহার? নাকি কল্যাণের স্বভাবসুলভ আচরণ? এ প্রশ্ন শুনে বিজেপি প্রার্থী হেসে বলছেন, ‘মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, তা প্র্যাকটিসের ব্যাপার৷ আমি একজন স্পোর্টসম্যান। মাঠে যেটা করে থাকি, রাজনীতির মাঠে নেমেও সেটাই করছি। এটাই আমার স্বভাব।’ মন তো জয় করলেন, কিন্তু জনসমর্থনও আদায়েও কি এভাবেই সফল হবেন কল্যাণ চৌবে? উত্তর দেবে সময়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.