নন্দন দত্ত, সিউড়ি: জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের ঘটনার এখনও জট কাটেনি। দম্পতির মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন নাকি আর্থিক বিবাদ, কী কারণে প্রাণ গেল পুত্রসন্তান-সহ ওই শিক্ষক, তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। নিহতের শাশুড়ির দাবি এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে নিহত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশের বন্ধু সৌভিক বণিক। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রামপুরহাটের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৌভিকের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার বিকালে রামপুরহাটের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সৌভিক বণিকের বাড়িতে পৌঁছায় মুর্শিদাবাদ থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। সৌভিকের বাড়িতে তল্লাশি চালায় তারা। নিহত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশের বন্ধু সৌভিকের ঘর থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করেছেন মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বরুণ বৈদ্য। সৌভিকের দাদা সৌরভ বণিক বলেন, “পুলিশ এসে কিছু কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছে। তবে মাসছয়েক ধরে ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। ফলে ভাই কোথায় আছে বলতে পারব না। পুলিশকেও তাই জানিয়েছি।”
সৌভিককে নিয়ে একটি মার্কেটিং এজেন্সি খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা নিহত ওই শিক্ষক। নিহত বন্ধুপ্রকাশের শাশুড়ির দাবি, তার জেরে চড়া সুদে ধার করে অন্তত ৭-৮ লক্ষ টাকা সৌভিককে দিয়েছিলেন তাঁর জামাই। তবে টাকা ফেরত দিতে চাইত না সৌভিক। টাকা ফেরতের কথা বললে প্রাণনাশের হুমকিও দিত সে। তাই তাঁর অনুমান, আর্থিক বিবাদের জেরে সপরিবারে খুন হতে হয়েছে ওই শিক্ষককে। নিহত ওই শিক্ষকের শাশুড়ি এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন।
দশমীর সকালে জিয়াগঞ্জে নিজের বাড়িতে সপরিবারে খুন হন বন্ধুপ্রকাশ পাল। বীরভূমের রামপুরহাট থানার সিউড়া গ্রামের বিউটির সঙ্গে বছর আটেক আগে বিয়ে হয়েছিল প্রকাশের। তাঁর বাড়িও ছিল সিউড়া গ্রামের পাশে নাইশোর গ্রামে। কিন্তু প্রকাশের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় তাঁর মা দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানার বাড়ালা গ্রামে থাকতে শুরু করেন। মুর্শিদাবাদে থাকলেও রামপুরহাটের সৌভিক বণিকের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন প্রকাশ। বিউটির মা বলেন, “দুই ননদ ও শাশুড়ি বিউটির উপর প্রায়শই অত্যাচার করত। সম্পত্তি নিয়েই মূলত তাদের অশান্তি হত। অশান্তির হাত থেকে বাঁচতে এবং ছেলের পড়াশোনার জন্যই জামাই জিয়াগঞ্জে জায়গা কিনে বাড়ি করে। সেখানেই থাকতে শুরু করে। সেই জায়গা নিয়েও অশান্তি করত। শাশুড়ি আমার মেয়েকে দেখতে পারত না।” বিউটির বাবা সুখেন মণ্ডলের গলাতেও পারিবারিক বিবাদের সুর স্পষ্ট। মেয়েকে অত্যাচার করা হত বলেই দাবি তাঁর।
এদিকে, ঘটনার প্রায় তিনদিন পর রাজ্য পুলিশের তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আটক দু’জন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলেও স্পষ্ট করেছে পুলিশ।
ছবি: সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.