ছবি: সুনীতা সিং
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সরকারি হোমে ‘যৌন নির্যাতনে’র ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল পুরুলিয়ার শিমুলিয়া। এদিন ওই হোমে যাওয়ার কথা ছিল বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোর্তিময় মাহাতো-সহ অন্যান্য বিজেপি (BJP) নেতৃত্বের। তবে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। তার ফলে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন হুগলির বিজেপি সাংসদ। হোমের সামনে আপাতত অবস্থান বিক্ষোভে শামিল সাংসদ-সহ বিজেপি প্রতিনিধি দল।
রবিবার একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে পুরুলিয়া (Purulia) সফরে যান লকেট চট্টোপাধ্যায়। তার মধ্যে মূল কর্মসূচি ছিল পুরুলিয়ার সরকারি হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানানো। এদিন লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee) পুরুলিয়া স্টেশনে পৌঁছনোর পর সেখান থেকে একটি মিছিল করেন। তাতে পা মেলান সাংসদ জ্যোর্তিময় মাহাতো-সহ আরও অনেকেই। ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে ওই মিছিল শেষ হওয়ার পর একটি পথসভাও করেন। ওই সভামঞ্চ থেকে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে সুর চড়ান লকেট। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও একবার ‘ভাইপো’ বলে কটাক্ষ করেন।
তারপর হোমে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে হোমের ঠিক ৫০০ মিটার আগে পুলিশ (Police) লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য বিজেপি নেতাকর্মীদের আটকে দেয়। অনুমতি ছাড়া কাউকে হোমে ঢুকতে দেওয়া যাবে না বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই ক্ষুব্ধ হন লকেট। পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ বচসায় জড়িয়ে পড়েন। কেন অনুমতি নিতে হবে, সেই প্রশ্ন করতে থাকেন। বচসা চলাকালীন পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভাঙতে থাকেন লকেট-সহ অন্যান্য বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। ব্যারিকেড ভেঙে হোমের একেবারে সামনে পৌঁছে যান। তবে সেখানেও কড়া পুলিশি প্রহরা মোতায়েন থাকায় ঢুকতে পারেননি কেউই। তাই হোমের সামনেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছে গেরুয়া শিবির।
উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগে ওই সরকারি হোমে কর্তৃপক্ষের মদতেই যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। নির্যাতিতারা পুলিশকে জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে এক বহিরাগত অজ্ঞাতপরিচয় যুবক হোমে এসে কর্তৃপক্ষের মদতে যৌন নির্যাতন চালায়। এই ঘটনায় ‘শিশির কাকু’ নামে একজন জড়িত আছে বলে আবাসিকরা অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বিচারক হোমে গিয়ে আবাসিক নাবালিকাদের কথা শোনেন। এরপরই তিনি পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে বিষয়টি জানান। হোমের সুপারিনটেনডেন্ট-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে পকসো আইনের দশ নম্বর ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুরুলিয়া সদর মহিলা থানার পুলিশ।
তবে এই হোম নিয়ে বিতর্ক আজ নতুন নয়। বাম আমলে নানা সমস্যায় এই হোম শিরোনামে আসে। হোম থেকে আবাসিক নাবালিকারা পাঁচিল টপকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরপরই হোমের পাঁচিল আরও উঁচু করা হয়। নজরদারি চালানোর জন্য আরও বেশি করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে অতীতেও এই হোমে কানাঘুষো যৌন নির্যাতনের কথা শোনা যেত। কিন্তু তা কখনও সামনে আসেনি। এবার ওই অভিযোগে মামলা রুজুর ঘটনায় কাঠগড়ায় উঠেছে হোম কর্তৃপক্ষ-সহ জেলা সমাজ কল্যাণ দপ্তর।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.