দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: রাস্তা ভুলে পথে পথে ঘুরেছিলেন একটা গোটা দিন। একে অসহনীয় গরম, তায় আবার পেটে একটা দানাও পড়েনি। ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে নুয়ে পড়েছিলেন রাস্তার ধারে। অবশেষে স্থানীয় মানুষ ও পুলিশের তৎপরতায় রবিবার চন্দননগরের পালপাড়া থেকে উদ্ধার হলেন এক ৭৬ বছরের বৃদ্ধা। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে উপযুক্ত পরিচর্যার পর তাঁকে চুঁচুড়ার বাড়িতে পৌঁছে দিলেন পুলিশকর্মীরা।
পালপাড়ায় রাস্তার ধারে একটি বাড়ির সামনে রবিবার সকাল থেকেই বসেছিলেন বৃদ্ধা অমিতা পাল। প্রচণ্ড দাবদাহে রীতিমতো ক্লান্ত ও অসুস্থ দেখাচ্ছিল বৃদ্ধাকে। পরনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক দেখে সন্দেহ হয় এলাকার মানুষের। তাঁরা ওই বৃদ্ধার নাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি নামও বলেন। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা কিছুতেই মনে করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত এলাকার মানুষই খবর দেন চন্দননগর থানায়। চন্দননগর থানার আইসি শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মহিলা পুলিশ ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। থানার ভিতরই তাঁকে খাবার খেতে দেওয়া হয়। প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও পরে থানার পুলিশকর্মীদের মানবিক আচরণে বৃদ্ধা অনেকটাই আশ্বস্ত বোধ করেন। পুলিশ কর্মীদের সেবাযত্নে সুস্থ বোধ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে সম্বিত ফিরে পান অমিতা পাল। মনে পড়ে যায় তাঁর বাড়ির ঠিকানা। পুলিশ প্রশ্ন করে জানতে পারে, চুঁচুড়ার ২৯ নং ওয়ার্ডের বুড়োশিবতলার হরধর গলিতে অমিতাদেবী বাড়ি। সেখানে ভাই মৃণাল পালের কাছেই বৃদ্ধা থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ মৃণালবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর হাতে বৃদ্ধাকে তুলে দেন। মৃণালবাবু জানান, শনিবার প্রাতঃভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরে দেখেন দিদি বাড়ি নেই। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি ফিরে না আসায় তিনি চুঁচুড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করেছিলেন।
শেষপর্যন্ত চন্দননগর থানার পুলিশ রবিবার বিকেলে যখন দিদিকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়, মৃণালবাবু আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। দিদি-ভাইয়ের এই মিলনে খুশি চন্দননগর থানার পুলিশ কর্মীরাও। দিদিকে কাছে পেয়ে আপ্লুত মৃণালবাবু জানান, পুলিশকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা তাঁর কাছে নেই। পুলিশ যে বিপদের দিনে মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু আজকের ঘটনাই তার বড় প্রমাণ। চন্দননগর থানার পুলিশকর্মীদের এই মানবিকতায় মুগ্ধ স্থানীয় মানুষও। এলাকার মানুষের বক্তব্য, অনেক সময় পুলিশ তাদের কাজ করতে গিয়ে নানা বাধা পায়। সেক্ষেত্রে সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য মানুষকেও পুলিশের কাজে সহযোগিতা করতে হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.