প্রতীকী ছবি।
ধীমান রায়, কাটোয়া: সন্ধেয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর বাড়ি ফেরেননি। মধ্যরাত থেকেই চলতে থাকে খোঁজখবর। সকালে দেখা যায় মাঠের আলে রক্তের দাগ। সেই দাগের সূত্র ধরে ভাগীরথীর ঘাটের কাছে জলে ডোবানো অবস্থায় এক ব্যক্তির কোপানো দেহ উদ্ধার করল কাটোয়া থানার পুলিশ। বুধবার সকালে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের বাবলাডাঙ্গার কাছে ভাগীরথীর ঘাটে কোমর জলে পাথরের বস্তা বাঁধা অবস্থায় ওই ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায় নিহতের নাম টুটুল বিশ্বাস (৪৩)। অগ্রদ্বীপের বাবলাডাঙ্গায় তার বাড়ি। নিহতের স্ত্রী সবিতা বিশ্বাসের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পূর্ব বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রুব দাস বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কে বা কারা এই খুনের ঘটনায় জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
অগ্রদ্বীপের বাবলাডাঙ্গার বাসিন্দা টুটুল বিশ্বাস পেশায় কৃষক। বাড়িতে রয়েছেন তার স্ত্রী সবিতাদেবী, বিধবা মা ভগবতীদেবী এবং এক ছেলে শুভম। ছেলে দশম শ্রেনীর ছাত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে চাষাবাদের পাশাপাশি টুটুলবাবু সুদের বিনিময়ে টাকা ধার দেওয়ার কারবারও করতেন। যদিও তার ওই কারবারের কোনও বৈধ অনুমতি ছিল না। জানা গিয়েছে, বসতবাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দুরেই টুটুলবাবুদের গোয়ালঘর। সবিতাদেবী জানিয়েছেন তার স্বামী রোজ সন্ধ্যায় বাড়িতে চা বিস্কুট খেয়ে বাইরে ঘুরতে যেতেন। প্রথমে কিছুক্ষন গোয়ালঘরের কাছে বসতেন। তারপর আশপাশে ঘুরতে যেতেন। বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দুরে টুটুলবাবুদের কৃষিজমি রয়েছে। সেখানেও প্রয়োজনে জমি দেখতে যেতেন। আবার রাত দশটা সাড়ে দশটার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসতেন।এটাই ছিল দৈনন্দিন রুটিন।
সবিতাদেবী বলেন,” কোনও কোনও দিন বেশি রাত হলে আমি স্বামীর খাবার ঢাকা দিয়ে রেখে আমরা শুয়ে পড়তাম। স্বামী বাড়ি এসে খাওয়া দাওয়া সেরে শুতে যেতেন। মঙ্গলবার সন্ধেয় বেড়িয়ে যাওয়ার পর একবার বাড়িতে আসেন। তারপর একটি ফোন এলে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যান। রাতে তিনি তখনও বাড়ি ফেরেননি। আমরা খেয়ে শুয়ে পড়ি। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি তখনও বাড়ি ফেরেননি। তখন তার মোবাইলে ফোন করলে সুইচ অফ পাওয়া যায়। ভোর থেকেই খোঁজখবর শুরু করি।”
সকাল থেকেই স্ত্রী সবিতাদেবী এবং ছেলে শুভম পাড়াপড়শিদের কাছে টুটুলবাবুর জন্য খোঁজখবর শুরু করেন। তারপর বাড়িতে খবর আসে টুটুলবাবুদের জমির কাছেই রক্তের দাগ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। বাড়ির লোকজন সেখানে যান। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তারপর আশপাশে দেহের সধানে খোঁজখবর শুরু হয়। তল্লাশি শুরু হয় ভাগীরথী নদীর কিনারা বরাবর। এরপর পাটুলি ঘাটের কাছে কোমরসমান জলে দেহটি উদ্ধার হয়। মৃতদেহের সঙ্গে পাথরের বস্তা বাঁধা ছিল। ফলে দেহটি জলে ডুবে ছিল। সেখান থেকে ক্ষতবিক্ষত দেহটি পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়া হাসপাতালে পাঠায়।
পাশাপাশি যেখানে রক্তের দাগ দেখতে পাওয়া গিয়েছে সেখানে পাঁচ ছয়টি কাগজের তৈরি খাবারের এঁটো প্লেট দেখতে পেয়েছে পুলিশ। তা দেখে পুলিশের ধারনা ওই জায়গায় বসে কয়েকজনের সঙ্গে রাতে সম্ভবত খাওয়া দাওয়া করেছিলেন টুটুলবাবু। তখনই তাকে খুন করে দেহটি নদীর জলে নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। তবে খুনের উদ্দেশ্যে কি তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। সুদের ব্যবসায় টাকা ধার দেওয়া নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে এই খুন? নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে এর পিছনে তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ। তবে নিহতের স্ত্রী জানিয়েছেন তার স্বামীর গলায় সোনার হার, একাধিক আঙুলে সোনায় বাঁধানো দামি রত্নের আংটি ছিল। কয়েক লক্ষ টাকার সেইসব অলঙ্কার বা মৃতদেহে ছিল না। এছাড়া তার স্বামীর কাছে অনেক টাকাও ছিল। সেই টাকাও পাওয়া যায়নি। তাই গয়না ও টাকার লোভেই খুন কিনা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.