বাবুল হক, মালদহ: স্কুল ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে বুধবার তুলকালাম কাণ্ড ঘটল মালদহ শহরের দক্ষিণ বালুচর এলাকার হিন্দি হাই স্কুলে। দিনভর ছাত্র বিক্ষোভ, অভিভাবকদের পাশাপাশি শহরের বাসিন্দারা ছুটে এসে ওই স্কুলের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখান, পুলিশ পৌঁছলে এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে অন্তত ১০ জন জখম হয়েছে। আহত হয়েছেন দু’জন পুলিশ কর্মীও। দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘন্টা টানাপোড়েনের পর অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করেছে পুলিশ। গন্ডগোল চলাকালীন ওই স্কুলে ছুটে যান মালদহ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তাপস কুমার বিশ্বাস এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি। অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে স্কুলের ঘরে তালাবন্দি করে রেখে জনরোষের কবল থেকে বাঁচিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পঞ্চম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাসের একাংশ ছাত্রীদের প্রতি অশালীন আচরণ এবং শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ ওঠে স্কুলেরই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালদহ শহরের বালুচর এলাকার হিন্দি হাই স্কুলে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একজোট হয়ে বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে ঘরবন্দি করে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইংলিশবাজার থানার পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সামনেই দুই শিক্ষককে আটকে রেখে চলে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ। ওই দুই শিক্ষকের এহেন আচরণের খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে আসেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা। তাঁরাও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রীদের অভিযোগ, স্কুলের ওই দুই শিক্ষক রাজেশ সাহা এবং স্নেহাশিস সিং বিভিন্ন সময়ে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে। অনেকের শরীরে হাত দেন বলে অভিযোগ। এরই প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ওই দুই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
এক অভিভাবক জানিয়েছেন, এদিন পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে দুই শিক্ষক শ্লীলতাহানি করেন। এবং কাউকে না জানানোর হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ছাত্রীর কান্নাকাটি শুরু করে। তা দেখেই স্কুলের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা শুরু হয় বিক্ষোভ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু পুলিশের সামনেই অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। যদিও এব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার রাম কোনও মন্তব্য করেননি। ছুটে যান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। বিক্ষোভ সামাল দিতে তাঁকেও লাঠি হাতে তাড়া করতে দেখা যায়। কৃষ্ণেন্দুবাবু দাবি করেন, ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করতে হবে। স্কুলে পৌঁছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মালদহের ডি আই তাপস বিশ্বাস। পরে ডিআই বলেন, “কি ঘটল, কেনই-বা ঘটল, এনিয়ে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিভাবকরাও অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন।”
এদিন সন্ধ্যায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যায় ইংলিশবাজার থানার পুলিশ। মালদহ জেলা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে ঘটনার তদন্ত চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.