সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র শুধু হোর্ডিংয়েই। ভিতরে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে পুলিশ ক্যাম্প! পুলিশকর্মীরা থাকছেন সেখানেই। আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের ঘর ‘দখল’ করে বাস করছেন খোদ ক্যাম্পেরই পুলিশ কর্তা। ২৪ বছর ধরে এমনই চলছে। দখলমুক্ত করার চেষ্টাই নেই। দুর্গাপুরের কাঁকসা থানা এলাকার মলানদিঘি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তথা পুলিশ ফাঁড়ি ছবি ঠিক এটাই।
১৯৯২ সাল। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় উত্তপ্ত মলানদিঘি এলাকা। অজয় নদ পেরিয়ে সন্ধে নামলেই বীরভূম থেকে ডাকাতদল ঢুকে পড়ত এই এলাকায়। প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরে কাঁকসা থানা থেকে পুলিশ আসার আগেই একের পর এক লুঠতরাজ চালিয়ে তারা পালিয়ে যাচ্ছে রাত থাকতেই। ১৯৯৩ সালে মলানদিঘির কেশপাড়ায় ডাকাতিতে বাধা দিতে গেলে এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে ডাকাতরা। মৃত্যু হয় তাঁর। তারপর থেকেই এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ির দাবি উঠতে থাকে।
১৯৯৫ সালে তৈরি হয় মলানদিঘি পুলিশ ফাঁড়ি। কিন্তু ফাঁড়ির জন্য আলাদা কোনও জায়গা ছিল না। তাই তখন থেকেই পুলিশ ফাঁড়ির ক্যাম্প চলছে মলানদিঘি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছ’শয্যার ইনডোর বিভাগই ‘দখল’ করে চলছে ক্যাম্প। সেই সময় যদিও বন্ধ ছিল ইনডোর বিভাগ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মোট ছ’টি ঘরে এই বছরের পর বছর ধরে চলছে ক্যাম্প। বর্তমানে মলানদিঘি পুলিশ ফাঁড়ির ৩০ জন সিভিক পুলিশ কর্মী, ১ জন এসআই, ১জন এএসআই, ২ জন কনস্টেবল, ১ জন ভিলেজ পুলিশ ও ৮ জন ড্রাইভার পালা করে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ক্যাম্পে থাকেন। তবে চিকিৎসকের ঘরে কেউ থাকেনা। তাই সেই ঘর এখন পুলিশ ফাঁড়ির এক সাব ইন্সপেক্টরের ‘দখলে’ বলে অভিযোগ। এইভাবেই ‘দখল’ করা স্বাস্থ্যভবনেই চলছে মলানদিঘি পুলিশ ফাঁড়ি।
বছর দুয়েক আগে মলানদিঘি ফাঁড়ির জন্যে হাটতলায় তিন বিঘা জমিও নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু সেখানে এখনও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। সরাসরি কিছু না বললেও ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যে অংশে পুলিশ ফাঁড়ি সেই অংশ বন্ধই পড়ে আছে।তাই চিকিৎসা কেন্দ্র চালাতে সমস্যা হয় না। অন্যদিকে, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাটতলার ওই জমিতে ফাঁড়ি তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পুলিশের উচ্চমহলে। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি–১ (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা জানান, ” ওই জমি মাপজোক করার পর অতিরিক্ত জেলাশাসক, ভূমি রাজস্ব দপ্তরের কাছে নথি রয়েছে। তার কাছ থেকে অনুমোদন এলেই আবাসন দপ্তর ফাঁড়ি নির্মাণ শুরু হবে।” কিন্তু কাজ কবে হবে, তা এখনও জানা নেই কারও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.