নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পুলিশের পোশাক পরে মন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বিতর্কে জড়ালেন রামপুরহাট থানার এএসআই রঞ্জন দত্ত। যদিও জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংয়ের দাবি, সেই সময় ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। ঘটনা না জেনে মন্তব্য করবেন না। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে বিরোধীরা। ‘রাষ্ট্রশক্তি তৃণমূলের পায়ে মাথানত করল’, কটাক্ষ বিরোধীদের। তদন্ত করে ওই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
রবিবার রামপুরহাট থানায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। ‘সম্মানীয়’ বলে একটি প্রকল্প পুলিশের তরফে শুরু করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বীরভূম জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য, রামপুরহাট ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পান্থ দাস। অনুষ্ঠান থেকে রামপুরহাট পুরসভা এলাকায় ‘সম্মানীয়’ প্রকল্পের জন্য দু’টি দল গড়ে দেওয়া হয়। একটি দলের প্রধান রামপুরহাট থানার এএসআই রঞ্জন দত্ত। মঞ্চে তাঁর হাতে ‘সম্মানীয়’ প্রকল্পের নিয়মকানুনের কাগজপত্র তুলে দেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কাগজ হাতে নেওয়ার পরেই মঞ্চে আশিসবাবুকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন ওই পুলিশ আধিকারিক। এ নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।
ঊর্দি পরে প্রণামকে ইস্যু করে আসরে নেমেছে বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব বর্মন বলেন, “তৃণমূলের আমলে সবই সম্ভব। এ রাজ্যে আইন তৃণমূলের তৈরি করা। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করতে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় পায়ের কাছে অবনত। সংবিধান এদের কাছে তুচ্ছ। পুলিশ এখানে পায়ের নিচে মাথা নত করে বোঝাতে চাইছেন তিনি কতটা বাধ্য। এই পুলিশ নিয়মনীতির কোনও তোয়াক্কা করে না।” বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, “ওই পুলিশ অফিসার পোশাক পরে প্রণাম করে বুঝিয়ে দিলেন তিনি আশিসবাবুর অতি বড় শিষ্য। পুলিশের পোশাক পরে চাকরিতে যোগদানের আগে রাজধর্ম পালনের শপথ নিয়েছিলেন। মাথায় অশোকস্তম্ভ লাগিয়ে পায়ের কাছে মাথা নত করে তিনি রাষ্ট্রশক্তিকে অবমাননা করেছেন। আমরা দাবি করব, নিরপেক্ষভাবে কাজ করুন। রাজধর্ম পালন করুন।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারীও এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে প্রণাম করতেই পারেন। কিন্তু যখন পোশাক পরে থাকবেন তখন তিনি প্রণাম করতে পারেন না। আমি দাবি করছি এই ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”
বিতর্কের মাঝে মুখ খুলেছেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পুলিশের নিয়মে কি রয়েছে বলতে পারব না। তবে হয়তো উনি আবেগবশত হয়ে প্রণাম করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি তাকে প্রণাম করতে দিইনি। আমার অন্য পরিচয় হল আমি একজন অধ্যাপক। সেই কারণে অনেক ছাত্র আমাকে প্রণাম করেন।” তবে এ বিষয়ে পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.