সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শীতের রাত। শুনশান এলাকা। গায়ে চাদর জড়িয়ে, ঝোলা নিয়ে পাঁচিলের নিচে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক নজর রাখছে কয়েকজন। একজন পাঁচিল টপকানোর চেষ্টা করছে। নিশ্চয়ই ভাবছেন চোরের হানা। নিশুতি রাতে এমন দৃশ্য দেখে তা মনে করাই স্বাভাবিক। তবে যদি পরের দিন কার্তিক পুজো হয়, তাহলে এদৃশ্য খুবই স্বাভাবিক। বুধবার অর্থাৎ কার্তিক পুজোর আগের রাতে এভাবে বন্ধুর বাড়িতে কার্তিক ফেলতে গিয়ে বিপদে পড়লেন একদল যুবক। ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল বর্ধমানের মিঠাপুকুরে।
রাতের আঁধারে বাড়িতে কার্তিক (Kartik Puja 2022) ফেলা যেন রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। বুধবার গভীর রাতে মজার ছলে এইভাবে কার্তিক ফেলতে গিয়ে মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেলেন কয়েকজন যুবক। দলবেঁধে প্রতিমা বগলে নিয়ে বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুর এলাকায় একটি বাড়িতে পাঁচিল টপকানোর চেষ্টায় ছিলেন ৬ জন। সেই সময়ই সেখানে হাজির হয় বর্ধমান থানার টহলদারি ভ্যান। যুবকদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তখনও একজন বগলদাবা করে রেখেছে কার্তিক প্রতিমা। একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ নিশ্চিত হয় যে তাঁরা কোনও অপরাধ সংগঠিত করতে যাননি। ততক্ষণে রাত গভীর হওয়ায় থানাতেই তাঁদের থাকতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কার্তিক কোলে নিয়ে থানা ছাড়েন ওই যুবকরা।
এই দলে ছিলেন শহরের গুডশেড রোড এলাকার বাসিন্দা অভিষেক সাহা। তাঁর এক বন্ধুর নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে। তাই বন্ধুরা মিলে কার্তিক ফেলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচিল টপকানোর সময় আচমকাই পুলিশ তাঁদের ধরে থানায় নিয়ে যায়। যদিও তিনি বলেন, “পুলিশ আমাদের ধরলেও কোনও খারাপ ব্যবহার করেনি। সারারাত থানাতেই ছিলাম। সকালে চলে যাই।” কার্তিক নিয়েই থানা থেকে বাড়ি চলে যান তাঁরা। বন্ধুর বাড়িতে এবার আর কার্তিক ফেলা হল না তাঁদের। আফশোস!
তবে পুলিশের এই ভূমিকায় খুশি শহরের অনেকেই। শহরের শাঁখারিপুকুর এলাকার বাসিন্দা তিমির পাল বলেন, “কার্তিক ফেলাটা অনেক সময় অত্যাচারের পর্যায়ে চলে যায়। আমার বাড়িতে আগে একবার ফেলেছিল। চার বছর পুজো করেছি। তার পরে আবার আমার বাড়িতে কার্তিক ফেলেছে। আবার পুজো করতে হবে চারবছর। এটা অত্যাচার। পুলিশ ঠিকই করেছে ওই সব দুষ্টুদের ধরে।” পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপর কামনাশিস জানান, একদল ছেলে গভীর রাতে পাঁচিল টপকানোর সময় পুলিশ ধরেছিল। জেরায় জানা যায় তারা কোনও অপরাধমূলক কাজে জড়িত নয়। বন্ধুর বাড়িতে কার্তিক ফেলতেই যাচ্ছিল। পরিজনদেরও এই বিষয়ে সব জানানো হয়। কিন্তু বেশি রাত হওয়ায় থানাতেই তারা থেকে যায়। সকালে তারা বাড়ি চলে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.