সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: লকডাউন চলায় রাজ্যজুড়ে তৈরি হয়েছে রক্তের সংকট। তার উপর চলছে না গাড়িঘোড়াও। তাই আট বছরের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর রক্ত দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় এসে গেলেও কীভাবে যে তা জোগাড় হবে, তা ভেবেই দিশেহারা ছিলেন শিশুর বাবা-মা। মঙ্গলবারই ছিল রক্ত দেওয়ার সেই নির্দিষ্ট দিন। এদিকে রক্তের অভাবে ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল শিশুটি। শেষপর্যন্ত তার প্রাণ বাঁচল সুন্দরবন পুলিশ জেলার মথুরাপুর থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশ আধিকারিক, বিডিও ও স্বাস্থ্য আধিকারিকের সম্মিলিত তৎপরতায়।
পাথরপ্রতিমা থানার কে প্লট থেকে মায়ের সঙ্গে মামারবাড়ি মথুরাপুরের নালুয়া গ্রামে বেড়াতে এসেছিল আট বছরের ছোট্ট নিবেদিতা। এর মধ্যেই ঘোষণা হয়ে যায় লকডাউন। মামারবাড়িতেই আটকে পড়ে তারা। ছোট্ট নিবেদিতা থ্যালাসেমিয়ার শিকার। এদিকে তাকে রক্ত দেওয়ার নির্দিষ্ট দিনও চলে আসে। মঙ্গলবারই ছিল সেই দিন। একদিকে রক্তের তীব্র সংকট অন্যদিকে স্তব্ধ যানবাহন। দিশেহারা অবস্থা ছোট্ট মেয়েটির অভিভাবকদের। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে রক্ত না পেয়ে ক্রমশই ঝিমিয়ে পড়ছিল নিবেদিতার ছোট্ট শরীরটা। মথুরাপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার গ্রুপের রক্ত হয়ত মিলতে পারে কিন্তু যাবেনই বা কীভাবে। কোনও গাড়িই তো নেই রাস্তায়। এসব ভেবে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তার অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনেরা।
এই খবর কানে আসে মথুরাপুর থানায় কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ার সুশান্ত হালদারের। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তিনি জানান থানার অফিসার ইনচার্জ গৌতম সাহাকে। গৌতমবাবু যোগাযোগ করেন মথুরাপুর ১ নম্বর ব্লকের উন্নয়ন আধিকারিক মহম্মদ জামিল আখতার এবং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়দেব রায়ের সঙ্গে। আর এক মুহূর্তও দেরি না করে নিবেদিতার মামারবাড়ি নালুয়া গ্রামে পৌঁছে যায় হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স। সেই অ্যাম্বুলেন্সেই নিবেদিতাকে নিয়ে আসা হয় মথুরাপুর হাসপাতালে। সেখানে দেওয়া হয় প্রয়োজনমতো রক্ত। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠে সে। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সেই মায়ের সঙ্গে ফের মামারবাড়ি ফিরে আসে সুস্থ নিবেদিতা।
লকডাউনের জেরে রক্তের সংকট, প্রশাসনের তৎপরতায় প্রাণ বাঁচল থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু নিবেদিতার মা অঞ্জলী বেরা এই ঘটনায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশ, বিডিও এবং বিএমওএইচের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এই দুর্যোগের দিনে তাঁর মেয়ের নতুন জীবন ফিরিয়ে দিল বলে জানিয়েছেন তিনি। নিবেদিতার সমস্ত আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরাও এই ঘটনায় আপ্লুত। সুন্দরবন পুলিশ জেলার অধীন মন্দিরবাজারের ডিএসপি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ছোট্ট নিবেদিতা সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়ায় তিনি খুশি। সিভিক ভলান্টিয়ার সুশান্ত হালদারের তৎপরতারও আলাদা করে প্রশংসা করেন তিনি। কামনা করেন নিবেদিতার সুস্থ দীর্ঘজীবন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.