ছবি: প্রতীকী
শেখর চন্দ্র, আসানসোল: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে অসহায় অবস্থা পরীক্ষার্থীর। চশমা ভুলে পরীক্ষা কেন্দ্রে কাঁদো কাঁদো অবস্থা তার। সহায় হয়ে উঠল পুলিশ পঞ্চায়েত এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ। সময় মতো সবার সহযোগিতা পাওয়াতেই পরীক্ষায় বসতে পারলেন ওই পরীক্ষার্থী।
সালানপুর ব্লকের আছড়া যজ্ঞেশ্বর ইনস্টিটিউশনে ঘটল এই ঘটনা। সেই স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিক (HS Exam) পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল জবা মণ্ডল। তার বাড়ি উত্তরামপুর গ্রামে। মঙ্গলবার বাড়ি থেকে জবাকে তার বাবা মহাদেব মণ্ডল পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ে আসেন। অন্য সকলের মত জবা পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু শিক্ষকরা লক্ষ্য করেন ওই পরীক্ষার্থী চুপচাপ বসে আছে। কাঁদো কাঁদো চোখে পরীক্ষার্থী জানায় চশমা ছাড়া সে কিছুই দেখতে পায় না। কিন্তু চশমা রয়ে গিয়েছে বাবার ব্যাগে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টা জানা মাত্রই তার বাবার মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু ফোনটি পরিষেবা সীমার বাইরে আছে বলে জানানো হয়।
ওই পরীক্ষার্থী অসহায় অবস্থা কথা ভেবে রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির ওসি মনোজিত ধারার সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তিনি পৌঁছে যান জিতপুর গ্রামে জবাদের বাড়িতে। কিন্তু বাড়ির লোকেরা জানান, জবার একটিই চশমা এবং সেটি তার বাবার কাছেই আছে। এরপর ওই গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বন্দনা মণ্ডলের স্বামী অমৃত মণ্ডলের সহযোগিতা চান পুলিশ। অমিতবাবু পুলিশকে জানান মহাদেব এক জীবনবীমা কর্মীর গাড়ি চালান। তার বাড়ি যাওয়া যেতে পারে। সেইমতো পুলিশের গাড়িতেই সকলে ওই জীবনবীমা কর্মী বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারে দু’দিন ধরে কাজে আসছে না মহাদেব।
এদিকে পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। জবাও কান্নাকাটি শুরু করে। পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় মহাদেব বাবুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। গাড়ি নিয়ে খোজাখুঁজির পর দেখা যায় আছড়া এলাকায় একটি গাছ তলায় বসে মহাদেব মণ্ডল। সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কথা তারা জানান মহাদেব মণ্ডলকে। তিনি জানান মেয়েকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে তার মোবাইলটির সারানোর জন্য এক দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই দোকানের পাশেই তিনি অপেক্ষা করছিলেন। তাই মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। এরপর পুলিশ মহাদেবকে গাড়িতে তুলে আছড়া যজ্ঞেশ্বর ইনস্টিটিউশনে নিয়ে যায়। জবার চশমাটি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য জবার পরিবার স্কুল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং স্থানীয়দের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। যজ্ঞেশ্বর ইনস্টিটিউশন প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী মাহাতো বলেন, অত্যন্ত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ওই পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে দিতে পারল। চশমা ছাড়া জবা একটি লাইনও লিখতে পারছিল না বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু পরে টেনশন মুক্ত হয়ে পরীক্ষা দিতে পারে। ওসি মনোজিৎ ধারা তিনি কর্তব্য পালন করেছেন। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নকে সফল করতে পেরে ভাল লাগছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.