সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রেলশহর আদ্রায় নিহত তৃণমূল নেতার তদন্তে পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে ‘সিট’ গঠন করা হল। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপকে নিয়ে ‘সিট’ গঠন করা হয়েছে। স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিমে রয়েছেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লানকুসুম ঘোষ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অভিযান) চিন্ময় মিত্তাল ও রঘুনাথপুর এসডিপিও যোধাবর অবিনাশ ভীমরাও। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বলেন,”ধৃতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” এই তদন্তের কাজে একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
অজস্র গলিপথ জুড়ে থাকা ভুলভুলাইয়ার এই রেল শহরে ‘পরদেশি শুটারদের’ পথ কে চিনিয়ে দিল সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। পুরুলিয়া পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা-ই আততায়ীদেরকে এই শহরের পথ চিনিয়ে দিয়েছিল কিনা তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। খুনের অপারেশনকে সফল করতে স্থানীয় অর্থাৎ রেল শহর আদ্রার বাসিন্দাদের সাহায্যে আততায়ীরা একাধিকবার রেইকি করে। জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য মিলেছে। এক মিনিটের কম সময়ে তারা অপারেশন সেরে আদ্রা শহরের পুরাতন বাজার তৃণমূল পার্টি অফিসের পাশে কোন গলিপথ দিয়েই তারা পালিয়ে যায় এই তথ্য উঠে আসছে।
[আরও পড়ুন: ‘প্রেম বন্ধ করা যাবে না’, প্রেসিডেন্সিতে ‘ভালবাসায় বাধা’ বিতর্কে পড়ুয়াদের পাশে মদন মিত্র]
তারপর আততায়ীরা ট্রেনে ধরে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছে কিনা সেই সব বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই বিষয়গুলি জানতে রেল শহর আদ্রার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ মোটর বাইকে চেপে আসা তিন আততায়ীকে ফুটেজ থেকে চিহ্নিত করেছে। এছাড়াও খুনের ঘটনার সময় তৃণমূল কার্যালয়ের বাইরে যারা ছিলেন বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে। সাতদিনের মধ্যে তাদেরকে ওই এলাকায় দেখা গিয়েছে কিনা সেটাও দেখছে পুলিশ।
আততায়ীরা হেলমেট সমেত যে বাইকটি ঘটনাস্থলে ফেলে যায় তার নম্বর প্লেট নকল। ওই নম্বর পশ্চিম বর্ধমানের আরটিও থেকে ইস্যু করা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নম্বর প্লেটটি ভুয়ো হওয়ায় বাইকটির ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর থেকে ঝাড়খণ্ডের বোকারোর বাসিন্দা বাইক মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়। ওই বাইক মালিক কিছুদিন আগেই বোকারো স্টিল সিটি থানায় অভিযোগ করেছিলেন। ফলে চোরাই বাইক নিয়ে ভাড়াটে খুনিরা অপারেশন করতে এলেও ওই বাইকের কোম্পানি ও মডেল অনুযায়ী বৈধ নম্বর খুঁজে এই বাইকে লাগানো হয়েছিল।
যাতে জেলার নাকা পয়েন্টগুলিতে বাইকের নম্বর সার্চ করে বৈধ গাড়ির বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। কোনভাবেই যাতে তারা পুলিশের বাধার মুখে না পড়ে। খুনের ঘটনার পর বাইকের নম্বর দেখে পুলিশ জানতে পারে পশ্চিম বর্ধমানের আরটিও থেকে ইস্যু হওয়া। তারপরেই তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে তথ্য আসে নম্বর প্লেটটি ভুয়ো। আততায়ীরা ওই চোরাই গাড়ির কোম্পানি ও মডেল দেখে বৈধ নম্বর ব্যবহার করলেও তা অন্য বাইক মালিকের। আততায়ীরা কোন পথে রেল শহর আদ্রায় ঢুকেছিল। কোথাও কোন আশ্রয় নিয়েছিল কিনা সবকিছু খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ব্রিটিশ আমলের এই শহর জুড়ে প্রচুর গলি। স্থানীয় মানুষজনদের সাহায্য ছাড়া শুটারদের প্রবেশ এবং বার হয়ে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফলে ঘটনার কিনারায় এই বিষয়গুলিতেই পুলিশ সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে খুনিদেরকে ধরতে চাইছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.