সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লকডাউনের সুযোগে অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় প্রায় দু’হাজার ফুট উঁচুতে তৈরি করেছিল কাঠ-কয়লার ভাটি (উনুন)। গত কয়েকদিন ধরে ওই পাহাড়ের জঙ্গল কেটে, কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছিল কাঠ-কয়লা। পাহাড় চূড়োয় টহল দেওয়ার সময় বলরামপুর বনাঞ্চলের ঘাটবেড়া বিটের কলাবেড়ায় তা নজরে পড়ে বনদপ্তরের। তারপরেই, বৃহস্পতিবার সাতসকালে বলরামপুর ও অযোধ্যা বনাঞ্চল যৌথ অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেয় দুটি ভাটি বা চারকোল।
এদিকে পাহাড়-জঙ্গল জুড়ে আগুন ঠেকিয়ে বন্যপ্রাণ বাঁচাতে পুরুলিয়ার তিন বিভাগেই তৈরি করা হল ‘ফরেস্ট ফায়ার প্রিভেনশন স্কোয়াড।’ আগুন নেভাতে এই স্কোয়াডের কাছে যেমন থাকবে পাইপ-পাম্প, চটের বস্তা। তেমনই থাকবে ফায়ার এক্সটিঙ্গগুইশার সিলিন্ডার। যেখানে জল মিলবে না সেখানে গাছের ডাল, চটের বস্তা ও এই সিলিন্ডার ব্যবহার করে আগুন নেভাবেন স্কোয়াড সদস্যরা। রেঞ্জে-রেঞ্জে এই স্কোয়াড সক্রিয় থাকবে রাতেও। জঙ্গলে যাতে কেউ আগুন না লাগায় তাই এদিন বাঘমুন্ডি বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষের তরফে মাইকিংও করে। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা বলেন, “লকডাউনের সুযোগ নিয়ে গাছ কেটে এইসব অবৈধ কারবার শুরু হয়েছিল। আমরা খবর পেতেই ব্যবস্থা নিই। রাতের বেলায় লোকজন জঙ্গলে ঢুকছে। আগুন লাগাচ্ছে। তাই আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।”
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলি এলাকায় এই কাঠ-কয়লার ভাটি নতুন বিষয় নয়। তবে বনদপ্তরের ধারাবাহিক অভিযানে এই অবৈধ কারবার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু লকডাউনের সুযোগে একেবারে পাহাড়ের মাথায় আবার এই কারবার শুরু হয়। জঙ্গল থেকে গাছ কেটে তা চারদিকে ঢাকা উনুনে ঢুকিয়ে প্রায় কুড়ি দিন তা পুড়িয়ে কাঠ-কয়লা তৈরি হয়। ভাটির চারপাশ থেকে আগুনের তাপ বার হতে থাকায় স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না বন্যপ্রাণ। এই সুযোগে কলাবেড়ায় শিকারও চলছিল। বলরামপুর ও অযোধ্যা বনাঞ্চলের আধিকারিক যথাক্রমে সুবিনয় পান্ডা ও সাগর চক্রবর্তী বলেন, “এক-একটি উনুন থেকে কুড়ি-পঁচিশ দিনে প্রায় কুড়ি কুইন্ট্যাল কাঠ-কয়লা তৈরি হয়। যা প্রায় পঁচিশ টাকা কেজি তে বিক্রি হয়ে থাকে। ফলে এক মাসে একটি ভাটি থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করে ওই কারবারীরা। আমরা ওই কাঠ-কয়লার উনুন দেখতে পেয়েই ভেঙে দিই।”
এই জেলার তিন বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জঙ্গল রয়েছে পুরুলিয়া বিভাগে। প্রায় ৬১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর। গত চার-পাঁচ দিনে এই বিভাগের প্রায় সব বনাঞ্চলেই আগুন লেগে যায়। ফলে তড়িঘড়ি তৈরি হল এই স্কোয়াড। প্রায় দশ জনের এই স্কোয়াডে থাকবে যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্য সহ বনকর্মীরা। তবে স্কোয়াড লিডার হিসাবে রেঞ্জের এক বনাধিকারিকের তত্ত্বাবধানে কাজ হবে।
ছবি- অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.