তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: শাড়ি কেনার নাম করে বাড়িতে ঢুকে সোমা সরকারকে খুন করেছিল দুই আততায়ী। পুরনো পরিচয়ের কারণে দরজা খুলে ওই দুই অভিযুক্তকে ঘরেও ঢুকতে দিয়েছিলেন মহিলা। তবে বিশ্বাস করেই চরম ফল ভুগতে হয়েছিল তাঁকে। গত ১৯ আগস্ট শিলিগুড়ির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোমা সরকারের দেহ তাঁর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়। মহিলার বুটিকের ব্যবসা ছিল। প্রাথমিকভাবে পুলিশ একটি খুনের মামলা রুজু করেছে।
মোবাইল কল রেকর্ডস, লোকেশন দেখে দুই অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়। এরপর তাদের গ্রেপ্তার করে দুই আততায়ীকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, টাকা ও স্বর্ণ অলংকার লুট করার উদ্দেশ্যে মহিলার থেকে শাড়ি কেনার ছুঁতোয় ঘরে ঢুকে তাঁকে খুন করে দুই আততায়ী। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে মূল দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা শহর ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করছিল এদিন। তার আগেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই অভিযুক্তের নাম রাজীব মজুমদার ও রোহিত ডাকুয়া। মৃতা মহিলা যে আবাসনে থাকতেন তার নিচে একটি ওষুধের দোকান ছিল রাজীবের। বাড়ি অরবিন্দ পল্লি এলাকাতে। রোহিতও একই এলাকার বাসিন্দা। আবাসনের নিচে ওষুধের দোকান থাকায় মহিলার পূর্বপরিচিত ছিল রাজীব। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টাকা ও অলংকার লুটের উদ্দেশ্যে বাড়িতে ঢুকে মহিলাকে খুন করে দু’জন। তাদের কাছে লুটের ১৪ হাজার টাকাও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসিপি অভিষেক গুপ্তা বলেন, “আমরা দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা তাদের কুকীর্তির কথা স্বীকার করেছে। লুটের উদ্দেশ্যে বাড়িতে ঢুকে মহিলাকে খুন করেছিল অভিযুক্তরা।” মৃতার মেয়ে কর্নিয়া সরকার বলেন, “পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে শুনে আমরা স্বস্তি পাচ্ছি। তবে আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।” পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের আগের রাত ১৮ আগস্ট প্রায় দশটা নাগাদ প্রথমবার দুই আততায়ী মৃতার বাড়িতে যায়। মহিলাকে তারা বলেন, উপহারের জন্য একটি শাড়ি কিনতে হবে। এত রাতে শাড়ি কিনতে আসায় খানিকটা অবাক হলেও রাজীব পূর্বপরিচিত হওয়ায় আপত্তি করেনি সোমা। তবে রোহিতের হাবভাব ভাল লাগেনি তাঁর। তাই সেদিন আর শাড়ি দেখাননি। ঘটনার দিন সকাল ন’টা নাগাদ ওই মহিলার বাড়িতে যায় দুই আততায়ী। সকালে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে তাদের ঘরে ঢুকতে দেন তিনি।
দরজা বন্ধ করে শাড়ি দেখাতে শুরু করতেই রাজীব পিছন থেকে বেঁধে রাখার জন্য ব্যবহার করা একটি শাড়ির টুকরো দিয়ে মহিলার গলায় টেনে ধরে। রোহিত মহিলার মুখ বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর নিথর হয়ে যায় মহিলার দেহ। এরপর আলমারি খুলে নগদ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চম্পট দেয় দুই দুষ্কৃতী। ঘটনার পর থেকে দোকান খোলেনি রাজীব। তাতেই পুলিশ প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে। রাজীব ও ওই মহিলার মোবাইল কল রেকর্ডস ঘেঁটে রোহিতের নাম উঠে আসে। ঘটনার সময়ে দুই মোবাইলের লোকেশন একই জায়গায় পাওয়া যাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ আরও তীব্র হয়। এরপর এদিন তাদের গ্রেপ্তার করে প্রাথমিক জেরা করতেই সব তথ্য সামনে আসে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.