সৌরভ মাজি, বর্ধমান: আট দিন পর বর্ধমানে মহিলা আইনজীবী খুনের কিনারা করল জেলা পুলিশ। শনিবার রাতে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে জেরার পরই খুলে গিয়েছে সমস্ত রহস্যের জট। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে ধৃত দুই ব্যক্তি সমস্ত অপরাধ কবুল করেছে বলে দাবি পুলিশের। সোমবার তাদের বর্ধমান আদালতে তোলা হবে।
গত রবিবার, কালীপুজোর দিন সকালে বর্ধমানের জামালপুরের আঝাপুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বর্ধমান জেলা আদালতের আইনজীবী মিতালি ঘোষের দেহ। হাত, পা বাঁধা অবস্থায় বাড়ির উঠোনে পড়ে ছিল বছর আটান্নর মহিলার দেহটি। মাথায় আঘাত ছিল। ময়নাতদন্তে স্পষ্ট হয়, তাঁর মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়েছে। তদন্তে নামে বর্ধমান পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত।
মিতালি দেবীর আত্মীয়-পরিজন, সহকর্মী, গ্রামের বাসিন্দা-সহ ১৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। নজরও রাখা হয় বেশ কয়েকজনে উপর। খুনের অভিযুক্ত সন্দেহে শনিবার রাতে আঝাপুর গ্রাম থেকে প্রশান্ত ক্ষেত্রপাল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে খণ্ডঘোষের এক গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হয় সুদীপ ঘোড়ুই নামে আরেকজনকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে অপরাধের কথা তারা দু’জনেই স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি। কীভাবে, কেন এমন ঘটনা ঘটাল, দু’জনের বয়ানে তা স্পষ্ট হয়েছে।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সুদীপ এবং প্রশান্ত দু’জনই মিতালি দেবীর পরিচিত। সুদীপ ডাব বিক্রেতা। মিতালি দেবীর বাড়িতে প্রচুর নারকেল গাছ থাকায়, তাঁর বাড়িতে যাতায়াত ছিল। সুদীপকে নিজের বাড়ির গাছের ডাব বিক্রি করতে দিতেন মিতালি দেবী। ধৃত আরেক ব্যক্তি প্রশান্ত গাড়ির খালাসি, সুদীপের বন্ধু। মিতালি দেবীকে খুনের অপারেশনের বিস্তারিত জানিয়ে এসপি ভাস্কর
মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘কালীপুজোর আগের রাতে পাঁচিল টপকে মিতালি দেবীর বাড়িতে ঢোকে সুদীপ ও প্রশান্ত। ধানের মড়াইয়ের আড়ালে ঘণ্টাখানেক ধরে লুকিয়ে ছিল তারা। এরপর মিতালি দেবী উঠোনে বেরলে, ফুলের টব দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। মাটিতে পড়ে যান মিতালি দেবী। ওরা ভাবে যে উনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। তাই তাঁর হাত, পা, মুখ বেঁধে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। ঘর লন্ডভন্ড করে টাকাপয়সা, গয়না লুট করে নিয়ে যায়।’
যদিও এই কাণ্ডের পর তারা কেউ এলাকা ছেড়ে পালায়নি। বরং দু’দিন ধরে তারা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বেশ ভাল খাওয়াদাওয়া করে। ফলে সন্দেহ বাড়তে থাকে পুলিশের। তদন্ত করে সুদীপ, প্রশান্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রথমদিকে মহিলা আইনজীবী মিতালি ঘোষের খুনের সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত কোনও বিষয় জড়িত রয়েছে বলে মনে করা হলেও, শেষপর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত যে নিছক লুটপাটের উদ্দেশেই একা মহিলার বাড়িতে এমন হামলা। তাঁকে খুনেরও কোনও উদ্দেশ্য ছিল না আততায়ীদের। তাই ফুলের টব দিয়ে আঘাত করার পর তিনি যে মারা গিয়েছেন, তাও তারা বুঝতে পারেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.