ছবি: প্রতীকী।
বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: পুলিশ উদাসীন। তাই বাধ্য হয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন গাংনাপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে (Gangnapur Gangrape Case) নিহত নির্যাতিতার পরিবার। হাই কোর্টে মামলা দায়ের পর অবশেষে নড়েচড়ে বসল পুলিশ। শুরু তদন্তে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোটা ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নতুন করে নাম যুক্ত হয়েছে একজন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতেরা হল আতিয়ার মণ্ডল, সরাফিল মণ্ডল, সইফুল দপ্তরী, মনিরুল মণ্ডল, হাতেম মণ্ডল ও মইরোদ্দি মণ্ডল। আতিয়ারের ১০ দিন এবং বাকি ৫ জনের ৯ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে রানাঘাট মহকুমা আদালত। এদিকে, এই ঘটনার মূলচক্রী হিসাবেশনিবার নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে মাঝেরগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য মতিয়ার রহমান মণ্ডলের নাম। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে মতিয়ার রহমান মণ্ডল। তার দাবি,”সেদিন রাতে ফোন করার পর আমি ছুটে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, ইসরাফিল মণ্ডল নামে একজনের সঙ্গে অসংলগ্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে ওই গৃহবধূকে। তাদের মধ্যে গত ৯ মাস ধরে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। ইসরাফিল সে কথা স্বীকার করে। সম্ভবত মানসম্মানের কারণেই ওই গৃহবধূ কীটনাশক খেয়েছিলেন। আমার নামে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
উল্লেখ্য, নদিয়ার গাংনাপুর থানার মাঝেরগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কামারবেড়িয়া গ্রামে নির্যাতিতা গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি। কর্মসূত্রে সৌদি আরবে থাকেন ওই গৃহবধূর স্বামী। তাই তাঁর ছেলেকে নিয়ে থাকতেন নির্যাতিতা। অভিযোগ, গত ৬ মার্চ রাত ১১টা নাগাদ বাড়িতে ঢুকে ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়। গণধর্ষণের পর গৃহবধূকে বিষ খাইয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। সেই খবর ওই গৃহবধূর বাপের বাড়িতে পৌঁছয়। তাঁর বাবা এবং মা তড়িঘড়ি অটো নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছন। নির্যাতিতার মায়ের দাবি, তাঁরা দেখেন মেয়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নির্যাতিতাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিলেও দু’বার তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা কোনওরকমে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে তাঁদের মেয়েকে স্থানান্তরিত করা হয় একটি নার্সিংহোমে। ওই নার্সিংহোমে সাত দিন থাকার পর কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে গত ১৪ মার্চ দুপুরে নির্যাতিতার মৃত্যু হয়।
গাংনাপুর থানায় বারবার অভিযোগ জানাতে যান নির্যাতিতার মা। তবে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলেই দাবি তাঁর। এরপর গত ১৭ মার্চ ডাকযোগে গাংনাপুর থানার ওসি-সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তাতেও পুলিশের কোনও হেলদোল তারা দেখতে পাননি। বাধ্য হয়ে গত ২১ এপ্রিল রানাঘাট মহকুমা আদালতের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। হাই কোর্টে মামলা দায়ের হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে গাংনাপুর থানার পুলিশ। এফআইআর দায়ের হয়। মোট ৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.