দেবব্রত মণ্ডল: অবশেষে পুলিশের জালে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। ৫৫ দিন পর খাঁচাবন্দি সন্দেশখালির ‘বাঘ’। পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাতে সন্দেশখালির মিনাখাঁর বামনপুকুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শেখ শাহজাহানকে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে বসিরহাট মহকুমা আদালতে। জানা গিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করবে পুলিশ। বিঘার পর বিঘা জমি ও ভেড়ি দখল, নারী নির্যাতন-সহ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ অভিযোগ রয়েছে গ্রামবাসীদের।
রেশন দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার স্ক্যানারে শেখ শাহজাহান (Shahjahan Sheikh)। খাতায় কলমে এখনও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ। গত ৫ জানুয়ারি তাঁর খোঁজে সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার বাড়িতে যান ইডি আধিকারিকরা। দুটি মোবাইল নম্বরে বার বার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। একটি নম্বর দীর্ঘক্ষণ ব্যস্ত ছিল। তবে আরেকটি নম্বরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ইডির কথা শুনেই ফোন কেটে দেন শেখ শাহজাহান। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকশো লোক জমা হয়ে যায়। মারধর করা হয় ইডি আধিকারিকদের। ঝরে রক্ত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়।
তার পর থেকেই ফাঁকা সাম্রাজ্য। এলাকাছাড়া সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’। কোথায় রয়েছেন শেখ শাহজাহান, তা নিয়ে টানাপোড়েন কিছু কম হয়নি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা প্রথমে দাবি করেন, তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। তবে পরে যদিও সে দাবি খণ্ডন করে গেরুয়া শিবির। দাবি করা হয়, পুলিশের ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ বাংলাতেই রয়েছেন শাহজাহান। সন্দেশখালির সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারও একসময় দাবি করেছিলেন, সন্দেশখালির এই দ্বীপ থেকে সেই দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন শাহজাহানকে। তবে শাহজাহান গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভের পারদ ক্রমশ বাড়তে থাকে। জন আন্দোলনে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালির গ্রামের পর গ্রাম। বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়।
প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশের ভূমিকা। কেনই বা ইডি গ্রেপ্তার করছে না শেখ শাহজাহানকে, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার পালটা সেই প্রশ্ন তোলেন। সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছিলেন, আদালত হাত-পা বেঁধে রাখায় শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। অবশ্য কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায় শেখ শাহজাহানকে পুলিশের গ্রেপ্তারিতে কোনও বাধা নেই। আদালতের রায়ের পরই তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তারির ডেডলাইন বেঁধে দেন। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ৫৫ দিন পর গ্রেপ্তার শেখ শাহজাহান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.