ফাইল ছবি
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: হামেশাই দাবি করেন তিনি চা বিক্রি করতেন। জানেন প্রত্যেকে। ২০১৬ সালে মাদারিহাটে বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে সাতটি বন্ধ চা বাগান খোলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেকথাও কেউ ভোলেনি। ফলাফল কি ছিল সেটাও অজানা নয়। তবুও চা বলয়ে প্রার্থীর ভোট প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে কিছু বলবেন সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। বৃহস্পতিবার কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে বিজেপির কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর সমর্থনে যে সভা করলেন সেখানে উলটো ছবি। চা বাগানের সমস্যা নিয়ে কার্যত নীরব থেকে গেলেন মোদি। অথচ আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর ভাগ্যবিধাতা চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজন। এমনটা হয়ত প্রত্যাশিত ছিল না চা বলয়ের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গার। তাই প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে বসে উশখুশ করা ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আলিপুরদুয়ারের চা শ্রমিকদের জন্য যে একটি লাইন ছিল সেটা হল “এমন সরকার গড়তে হবে যে চা শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করতে পারে।” এর বাইরে সবটাই ছিল নিজের প্রশস্তি এবং তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেসকে কটাক্ষ। চা বলয়ের শ্রমিক নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে দৃশ্যতই হতাশ। আবার অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ, বিজেপি সরকার চা শিল্পের ভূত ভবিষ্যৎ নিয়ে পুরোপুরি উদাসীন। কংগ্রেস আমলে তৈরি ‘টি অ্যাক্ট ১৯৫৩’ মেনে চলতে নারাজ। যেমন, আইএনটিইউসি সমর্থিত ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মণিকুমার দরনাল বলেন, “আগে চা শিল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারি ছিল। বিজেপি সরকার সেটা তুলে দিয়েছে। চা পর্ষদকে নিষ্ক্রিয় করে ছেড়েছে। ৩২০ কোটি টাকা চা শিল্প সাবসিডি পায়। সেটাও দিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও সেই উদাসীনতা ধরা দিয়েছে।”
এদিন বিরোধী শিবিরের অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন বন্ধ চা বাগান, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি বলেন শুনতে। যেমন, ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক গোপাল লামা বলেন, “আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রী চা শিল্পের সমস্যা নিয়ে বলবেন। কিন্তু কৌশলে এড়িয়ে গেলেন।” কেন? গোপালবাবুর অভিযোগ, আট বছর আগে ডুয়ার্সে বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে যে আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন একটিও রক্ষা করেননি। সেটা মনে আছে জন্যই হয়ত তিনি এবার সচেতনভাবে চা বাগানের প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন। সেবার ঠিক কি আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী? চা শ্রমিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে মাদারিহাটে বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে সাতটি বন্ধ চা বাগান খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র একটি বাগানও খুলতে পারেননি। পরে রাজ্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে পাঁচটি বাগান খুলে দেয়।
যদিও ২০১৯ জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, উত্তরবঙ্গের বন্ধ চা বাগানগুলি খোলার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। রাজ্যের বন্ধ হয়ে যাওয়া চা বাগানগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে। ওই মিথ্যে দাবি দলেরই লোকজন মেনে নিতে পারেনি বলে চা শ্রমিক মহলের অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে সেজন্যই কি এবার চা বাগানের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন? আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা অবশ্য দাবি করেন, “তেমন কিছু নয়। যতটা দরকার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। সব সভায় একই কথা বলে কেউ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.