রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বিরোধীরা অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে যান সেখানকার সঙ্গেই নিজের আন্তরিক যোগ খুঁজে পান। ব্যতিক্রম হল না উত্তরবঙ্গেও। বক্তব্যের শুরুতে ময়নাগুড়িতে মোদি বললেন, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আমার বিশেষ সম্পর্ক আছে। কী সেই সম্পর্ক? মোদি বললেন, “আপনারা চা উৎপাদন করেন, আমি চা তৈরি করি। চায়ের সঙ্গে আপনাদেরও সম্পর্ক আমারও সম্পর্ক।” এদিন বাংলায় প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন বাঙালিবাবুর বেশেই। বিজেপি অবাঙালিদের দল, এই দুর্নাম ঘোচাতেই কি এরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলেন মোদি? এ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পর, এরাজ্যেরই মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ শানালেন মোদি। এবারে অস্ত্র সিবিআই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা। প্রধানমন্ত্রী বললেন, “দেশের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও মুখ্যমন্ত্রী হাজারো গরিব মানুষের টাকা যারা লুটে নিয়েছেন তাদের জন্য ধরনায় বসেছেন। চোর, লুটতরাজদের বাঁচানোর জন্য আপনি সত্যাগ্রহ করবেন? আজ, পশ্চিমবঙ্গে এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায়, যিনি গরিব মানুষের টাকা লুটকারীদের সমর্থনে ধরনা দিচ্ছে। চিটফান্ড মামলার তদন্তে আপনার এত ভয় কীসের? সারদা-নারদার ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেক আশ্বাস্ত করতে চাই, এই চৌকিদার কাউকে ছাড়বে না। লুণ্ঠনকারী হোক কিংবা তাদের সাহায্যকারীরা কেউ ছাড় পাবে না। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে যারা জড়িত তাঁরা কঠোর শাস্তি পাবেন। যত খুশি লোক আনুন, যত খুশি নেতাদের নিয়ে ধরনা দিন, শাস্তি পেতেই হবে।”
ধরনা ইস্যুতে বিরোধী মহাজোটের অন্য নেতাদেরও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কলকাতায় মঞ্চ তৈরি করে যারা মোদি-মোদি করলেন তাদের বলছি, দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে আর কোথায় কোথায় ধরনা দেবেন? যারা পুরোপুরি দুর্নীতিবাজ তাঁরাই মোদিকে ভয় পায়। আমরা দুর্নীতিবাজদের বিদেশ থেকে তুলে আনছি, আর এরা ওদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। দালাল-লুটতরাজদের বাঁচানোর আপনাদের এই চেষ্টা কোনওদিন সফল হতে দেবে না মোদি।” প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, মহাজোটের কোনও নীতি নেই, দেশের জন্য কোনও দিশানির্দেশ নেই। রাজ্যে বিজেপি নেতাদের সভা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের আবেগ উসকে দিয়ে মোদি দাবি করলেন, তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে, আর তা তাদের আচরণেই স্পষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, “এখানকার সরকার অনুপ্রবেশকারীদেরও স্বাগত জানান, অথচ বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাংলায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। সেই দলকে আটকানো হয়, যে দলের গোড়াতে রয়েছে বিবেকানন্দের আদর্শ।”
এদিন ময়নাগুড়ির সভা থেকে রাজ্যের সিন্ডিকেটরাজ নিয়েও সরব হন মোদি। বলেন, ত্রিপুরার পথ ধরে এবার বাংলাতেও আসবে পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “তৃণমূলের পায়ের তলার জমি যে সরছে তা বোঝা যায়, যখন ওরা হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেয় না। গুন্ডা আর সিন্ডিকেট থেকে বাংলাকে মুক্তি দিতে হবে। দিদি দিল্লি যাওয়ার জন্য ব্যস্ত, আর বাংলার গরিব মধ্যবিত্তদের সিন্ডিকেটের অত্যাচারের মুখে ফেলে দিয়েছেন। এই জগাই-মাধাইয়ের জোট এবার শেষ হওয়া উচিত। বাংলার যুবসমাজকে অপরাধমূলক কাজকর্ম থেকে মুক্তি দিতে হবে। প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরায় একসময় কমিউনিস্টরা রাজত্ব করত। বিজেপি কর্মীরা ত্রিপুরায় বামেদের উপড়ে ফেলেছেন। যা ত্রিপুরায় হয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গেও হতে চলেছে। আপনাদের সহায়তায় সত্যিকারের ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ বাংলায় আসতে চলছে। জগাই-মাধাইয়ের বিদায় নিশ্চিত।”
এদিন সভার আগে বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ফালাকাটা-সলসলাবাড়ি জাতীয় সড়ক উদ্বোধন করেন তিনি। ফোর লেনের ৩১-ডি জাতীয় সড়কটি ৪১.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। আড়াই বছরে সম্পূর্ণ হবে কাজ। একই সঙ্গে, ময়নাগুড়িতে হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন করলেন মোদি। এর ফলে হাই কোর্টের ছোট ছোট মামলাগুলি এখন উত্তরবঙ্গেই সমাধান করা যাবে। ২০ বছর আগে হাই কোর্ট ছাড়পত্র দিয়েছিল, এতদিনেও মঞ্জুর হয়নি, অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.