সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর : ঠাকুনগরের সভায় মতুয়াদের মনে পেতে বার্তা দিয়েছিলেন। আর দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভা কার্যত রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাত বাড়িয়ে দিল আরও। মোদির মুখে ‘তৃণমূলের বিদায়’ এর হুঁশিয়ারি শুনে ক্ষোভ আর চেপে রাখতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী।প্রতিক্রিয়ায় তাঁর পালটা চ্যালেঞ্জ, ‘আগে তো দিল্লি থেকে বিজেপি সরকার বিদায় নিক। তারপর রাজ্যের কথা ভাববে। আমরা সবাই এক থাকব, বিদায় নেবেন উনি।’
শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ দুর্গাপুরের অণ্ডাল বিমানবন্দরে নামে মোদির চপার। সেখান থেকে নেহরু স্টেডিয়ামে যান প্রধানমন্ত্রী। স্টেডিয়ামের ভিড় দেখে আপ্লুত কণ্ঠে মোদি বলেন, ‘এবার তৃণমূলের বিদায় হবেই। এত ভিড় দেখে আমি নিশ্চিত, বাংলায় পরিবর্তন আসবেই।’ ঠাকুরনগরে মতুয়াদের সভায় বিশৃঙ্খলতার জন্য দুর্গাপুরের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করেন। আহতদের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করেন। গত মঙ্গলবার কাঁথিতে অমিত শাহর সভা সেরে ফেরার পথে বিজেপি কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘ওঁদের আঘাত করে মনোবল ভেঙে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওঁরা ফের মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, আজ এই সভায় এসেছে। বিজেপির প্রত্যেক কর্মী, সমর্থককে বলছি – আপনাদের এই আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না। যত আটকাবেন, তত আমাদের ক্ষমতা বাড়বে। প্রদীপ নিভে যাওয়ার সময় শিখা আরও দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। তৃণমূলেরও সেরকম অবস্থা হয়েছে। এই ভিড় দেখে ঘুম ছুটেছে দিদির।’ যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দুর্গাপুরের বাইরে থেকে লোকজন জড়ো করে প্রধানমন্ত্রীর সভা ভরিয়েছে বিজেপি।
[ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পাশে মোদি, নাগরিকত্ব বিলে চাইলেন তৃণমূলের সমর্থন]
এতদিন রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। এবার পালটা অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। নেহরু স্টেডিয়ামের সভা থেকে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য, ‘আমরা উন্নয়ন করছি, বাজেটে অনেক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলার সরকার এসব ব্যাপারে উদাসীন। প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যায় না।’ বাজেট নিয়ে তাঁর মন্তব্যে, ‘অন্তর্বর্তী বাজেট তো ট্রেলার। ভোটের পর যখন ফের ক্ষমতায় ফিরব জনসমর্থন নিয়ে, তখন নতুন ভারত তৈরিতে আরও অনেক প্রকল্প হবে।’
[‘কাঁটাতার বসানোর জমি দিচ্ছে না’, অনুপ্রবেশ ইস্যুতে রাজ্যকে আক্রমণ রাজনাথের]
প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তৃতা শোনার পর রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মোদি দেখে দেখে ভাষণ পড়েন মাত্র, নিজে থেকে কোনও বক্তব্য দিতে পারেন না বলে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠাকুরনগরের সভা থেকে মোদি যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে তৃণমূলের সমর্থন চেয়েছেন, তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট জবাব, ‘কেন সমর্থন করব? ওরা এনআরসি করে আসাম থেকে বহু বাঙালিকে বের করে দিতে চাইছে। নানা জায়গায় এভাবে অন্যান্য ধর্মের মানুষজনকে তাড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে সমর্থন চাইলে, এনআরসি প্রত্যাহার করা উচিত।’ এরপর তাঁর চ্যালেঞ্জ, বাংলাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। দিল্লি থেকে এই সরকার বিদায় নেবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.