ফাইল ছবি।
সম্যক খান, মেদিনীপুর: কোনও আবেদন করেননি, কোথায় বাড়ি হয়েছে, তাও জানেন না। অথচ তাঁর নামেই ‘আবাস যোজনা’র অধীনে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য অভিনন্দন পত্র চলে এল খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে! এসেছে মোবাইল বার্তাও। কী করবেন, না করবেন ভেবে অস্থির মেদিনীপুরের (West Midnapore) উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সিদ্ধার্থ দত্ত। যোগাযোগ করছেন নিজের অ্যাকাউন্ট থাকা ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গেও। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কোনও কূলকিনারা করতে পারেননি তিনি। উলটে আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব, নানা মহলে শুধুই বিদ্রুপ হজম করতে হচ্ছে তাঁকে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ১ নম্বর উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সিদ্ধার্থ দত্ত। গত ২২ তারিখ বিকেল ৪ টা ২৫ মিনিটে হঠাৎ একটি অভিনন্দন বার্তা ভেসে আসে তাঁর মোবাইলে। তাতে লেখা, ‘‘প্রিয় সিদ্ধার্থ দত্তজি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PM Awas Yojona) আরবানের অধীনে বাড়ি নির্মাণের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। এই বাড়িগুলি আপনার মতো কোটি কোটি সুবিধাভোগীদের জীবনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি। অমৃতকালের সময় ভারতের নবনির্মানে আপনার অবদান গুরুত্বপূর্ণ।’’ এই অভিনন্দ বার্তার সঙ্গে একটি অভিনন্দন পত্রের পিডিএফ (PDF) লিঙ্কও দেওয়া হয়। সঙ্গে লেখা, অনুগ্রহপূর্বক এটি গ্রহণ করিবেন – নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এ বিষয়ে বিন্দুবিসর্গ জানেন না বলে জানিয়েছেন খোদ সিদ্ধার্থবাবু।
গত প্রায় কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে সিদ্ধার্থবাবু সরকারি চাকরির সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন জেলা ঘুরে বর্তমানে তিনি এজেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ১। তাঁর আদি বাড়ি কামারহাটিতে। লকডাউনের (Lockdown) আগে ২০১৯ সালে তিনি এক বিমা সংস্থার কাছ থেকে গৃহঋণ নিয়ে পানিহাটিকে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। সম্বল বলতে তাঁর ওইটুকুই। এছাড়া আর কোথাও কোনও সম্পত্তি নেই বলেই জানিয়েছেন সিদ্ধার্থ দত্ত। তিনি বলছেন, ”মোবাইলে মেসেজটা পেয়েই একটু ঘাবড়ে যাই। যতটুকু জানি, আবাস যোজনায় বাড়ি পেতে হলে নির্দিষ্ট নিয়মে প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হয়। কিন্তু আমি তো কিছুই করিনি। আমি তো ওই প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার উপযুক্তই নই। কোথা থেকে এ ধরনের ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটে গেল সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।”
তাঁর প্রশ্ন, তার নামে আদৌ কোথাও বাড়ি তৈরি হয়েছে কিনা, সেক্ষেত্রে কার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, কোনও জাল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে কিনা। কেউ তার আধার কার্ড অসৎ উদ্দেশে ব্যবহার করছে কিনা, সেটাই এখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিদ্ধার্থবাবু এদিনই যে সংস্থার কাছ থেকে ২০১৯ সালে পানিহাটিতে (Panihati) ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ নিয়েছিলেন সেই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সপ্তাহখানেক পর তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি তিনি তদন্তের জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.