বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, রানাঘাট: রেশনের চাল পাওয়া থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে তা চুপিসাড়ে বাজারে বিক্রির চেষ্টা। এই অভিযোগে নদিয়ার ধানতলা থানার দত্তপুলিয়া গ্রামের চালের এক গোডাউন সিল করে দিল পুলিশ। গোডাউন মালিকের খোঁজ মেলেনি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই চালের গুদামের মালিক বিজেপি কর্মী। বিজেপির মদতেই এমন বেআইনি কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির দাবি, দলের সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনও সম্পর্কই নেই। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হোক।
দত্তপুলিয়া গ্রামে ননী সাহা নামে এক ব্যক্তির চালের গুদাম আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধে নাগাদ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা দেখতে পান, ওই গুদাম থেকে FCI-এর ছাপ দেওয়া বস্তা থেকে প্লাস্টিকের বস্তার চাল ঢালা হচ্ছে। ২৫ কেজির এই প্লাস্টিকের বস্তাই খোলা বাজারে বিক্রি হয়। এই দৃশ্য দেখে তাঁদের সন্দেহ হয় যে সরকারি চাল, যা এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের বিনামূল্যে পাওয়ার কথা, তা চুপিসাড়ে অন্য বস্তায় ঢেলে বেআইনিভাবে বিক্রির চেষ্টা করছেন ননী সাহা। তাঁরা সেখানেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যরাও এর প্রতিবাদ জানান। খবর পৌঁছয় ব্লক প্রশাসন ও ধানতলা থানায়। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে ছুটে আসে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে গোডাউনটি সিল করে দেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে ননী সাহার খোঁজ মেলেনি।
এই ঘটনার পরই রানাঘাটের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রানাঘাট উত্তর পূর্বের বিধায়ক সমীর কুমার পোদ্দার অভিযোগ করেন, গোডাউন মালিক ননী সাহা বিজেপি কর্মী। লোকসভায় রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের আনন্দে তিনি মিষ্টি বিলি করেছিলেন। তাই বিজেপির মদতেই এফসিআইয়ের চাল বেআইনিভাবে বিক্রির চক্রান্ত করেছিলেন। এই অভিযোগ খারিজ করে নদিয়ার দক্ষিণ জেলা কমিটির বিজেপি নেতা অটল ঘোষের দাবি, দলের সঙ্গে ননী সাহার কোনও যোগ নেই। তিনি দলের কর্মী বা সমর্থক – কেউ নয়। বরং গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হোক। সঠিক তদন্ত হলে হয়ত বোঝা যাবে, এর পিছনে তৃণমূলই দায়ী।
মহকুমার প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এভাবে চাল বিক্রির চক্রান্তের অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে খবর পাঠানো হয়েছে। তাদের ছাপ দেওয়া বস্তার চাল এই গোডাউনে কোথা থেকে এল, তা খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছে প্রশাসন। ধানতলা থানার পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে এফসিআই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তারপরই তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তদন্ত এগোবে। এই লকডাউনের সময়েও প্রশাসনিক নির্দেশ না মেনে বিভিন্ন জায়গায় রেশন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে তাতে যে বিশেষ সুরাহা হয়নি, রানাঘাটে এভাবে সরকারি চাল পাচারের অভিযোগই তার প্রমাণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.