বাবুল হক, মালদহ: তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দুলাল সরকার খুনে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, শাসকদলের জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি খুনে মূল অভিযুক্ত নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির ডেরাতেই প্রায় দু’মাস শুটাররা ছিল। ‘অপারেশন’ সফল করতে দু’টি প্ল্যান তৈরি করেছিল সুপারি কিলাররা। প্ল্যান ‘এ’ ফেল করলে তৈরি ছিল দ্বিতীয় পরিকল্পনাও। খুনের দিন বাইক থেকে নেমে পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আশরফ নামে এক দুষ্কৃতী। বাকিদের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শার্প শুটার বলে পরিচিত আশরফ গুলি চালাত বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
এদিকে শুটার টিঙ্কু ঘোষ, শামি আকতার ও অভিজিৎ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একটি নাইন এমএম পিস্তল, দুটি ওয়ান শাটার পিস্তল এবং ৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়াও খুনের সময় পরে থাকা কাপড় এবং জুতো উদ্ধার হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে মালদহ জেলা পুলিশ।
ঘটনায় মোট ৭জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। পুলিশের দাবি, ঘটনার নীল নকশা তৈরি করেছে নরেন্দ্রনাথ ঘনিষ্ঠ স্বপন। পলাতক রোহন বিহারের দুষ্কৃতীদের ভাড়া করে। তার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছে। জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা লাগাতার নজর রেখেছিল দুলালের উপর। মওকা পেতেই তাঁকে ২ জানুয়ারি খুন করা হয়।
কিন্তু কেন এই খুন? সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, মালদহে মালগাড়ির রেক নামানো নিয়ে ভিনরাজ্যের ঠিকাদারদের থেকে তোলাবাজি করতেন নরেন্দ্রনাথ। রেক নামানোর পর অনেক লরি মালদহ শহরের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করত। অভিযোগ, লরিপ্রতি প্রায় ৫ হাজার করে টাকা তুলতেন নরেন্দ্রনাথ ও তাঁর দলবল। নরেন্দ্রনাথ মাসে প্রায় ৩০-৪০ লক্ষ টাকার তোলাবাজি করতেন বলে অভিযোগ। দুলালের দল থেকে নরেন্দ্রনাথের কাছে ভিড়েছিলেন রোহনও। তাঁর সমাজবিরোধী কার্যকলাপের জন্য় দুলাল তাড়িয়ে দেন বলে জানা গিয়েছে। সেই রাগ ছিল রোহনের। এদিকে, ২০২২ সালের পর থেকে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন নরেন্দ্রনাথ। তাঁর আশঙ্কা ছিল গোটা সিন্ডিকেট দখল করে নেবেন দুলাল। তবে মৃত তৃণমূল নেতা সিন্ডিকেট বা তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ কেন নরেন্দ্রনাথকে সন্দেহ করল? জানা গিয়েছে, খুনের আগে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার ক্যাম্প অফিসের সামনে দেখা গিয়েছিল রোহন ও নরেন্দ্রনাথকে। সিসিটিভি ফুটেজে সেই ছবি ধরা পড়েছে। তার সঙ্গে তাদের মোবাইল কল লিস্ট ও আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।
দুলাল খুনের পরই ঘটনায় ‘বড় মাথা’ যুক্ত বলে অভিযোগ তুলছেন তাঁর স্ত্রী চৈতালী। সিন্ডিকেটের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়েই দুলালকে খুনের পরিকল্পনা করেন নরেন্দ্রনাথ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। এদিকে দুলাল-খুনে অভিযুক্ত রোহন রজক ও বাবলু যাদব এখনও ফেরার। পলাতক শার্প শুটার আশরফও। তাদের খোঁজে তল্লাশি জারি রেখেছেন তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.