সুমন করাতি, হুগলি: পর্বতশৃঙ্গের টানে বারবার বেরিয়ে পড়া দুর্গমের উদ্দেশে। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে জয়পতাকা ওড়ানো। এভাবেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন চন্দননগরের (Chandannagar) পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক। কিন্তু মাকালু শৃঙ্গে পাড়ি দিয়ে যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুমুখে পড়েন তিনি। তবে পাহাড়ের খাঁজ-ভাঁজ যাঁর নখদর্পনে, তাঁকে তো সহজে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই পায়ে তুষার ক্ষত, নিউমোনিয়া (Pneumonia) নিয়ে দেড় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটিয়ে শেষে বাড়ি ফিরে এলেন পিয়ালি বসাক। মেয়েকে কাছে পেয়ে স্বভাবতই আবেগে ভাসলেন মা-বাবা। মেয়েকে নিয়ে গর্বিত তাঁরা।
মাকালু (Makalu) পর্বতশৃঙ্গ জয় করে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে শনিবার সন্ধেয় চন্দননগরের বাড়িতে ফিরলেন পাহাড়ি কন্যা পিয়ালি বসাক। তবে এই ফেরা অন্যান্যবারের চেয়ে কিছুটা আলাদা। বিশ্বের অন্যতম এই উঁচু শৃঙ্গজয়ের পর শেরপা ছাড়া একা ফেরার পথে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মারাত্মক বিপদে পড়েছিলেন তিনি। প্রায় ২২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন পাহাড়ের উপর খোলা আকাশের নিচে, বরফে উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পিয়ালিকে। তাঁর পায়ের চারটে আঙুলে তুষার ক্ষতের সৃষ্টি হয়। সেই অবস্থায় কোনওক্রমে নিচে নামার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে ভরতি করা হয় কাঠমাণ্ডুর (Kathmandu) একটি হাসপাতালে।
প্রায় দেড় সপ্তাহ হসপিটালে চিকিৎসাধীন কিছুটা সুস্থ হওয়ার শনিবার পিয়ালি কলকাতায় ফেলেন শুধু আঙুলের ক্ষত নয়, তার উপর রয়েছে নিউমোনিয়া। তাঁরও চিকিৎসা হাসপাতালে চললেও এখনও তাঁর বুকে সর্দি এবং কাশি রয়েছে। তিনি হাসপাতালে থাকলেও বাড়িতে মা, বোন এবং তাঁর অসুস্থ পিতার জন্য তাঁর মন সর্বদা ছটফট করেছে। অবশেষে শনিবার তিনি তাঁর চন্দননগরের বাড়িতে ফিরে আসেন।
ইতিমধ্যেই পিয়ালি এভারেস্ট, মাকালু-সহ যতগুলি আট হাজারি পর্বতশৃঙ্গ আছে, তাঁর মধ্যে অন্নপূর্ণা, লোৎসে, ধৌলাগিরি-সহ মোট ছটি ৮০০০ উচ্চতাসম্পন্ন পর্বতশৃঙ্গ তিনি জয় করেছেন। পিয়ালির এই মরণপণ সংগ্রাম এবং সাধনার স্বীকৃতি জানিয়েছে সারা দেশ। চন্দননগরের আপামর মানুষ বলছেন, তাঁদের ঘরের মেয়ে পিয়ালির এই সাফল্যে গর্বের শেষ নেই। ভারতের প্রথম মহিলা পর্বতারোহী বাচেন্দ্রি পাল ফোনে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, পিয়ালি শুধু বাংলার নয়, সারা ভারতের পর্বতারোহীদের কাছে গর্বের মানুষ। তিনি যে ইতিমধ্যে যে কয়টি আটহাজারি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন, এর নজির খুব কম আছে। ভারতবর্ষের মেয়েদের মধ্যে তো বটেই, পুরুষদের মধ্যেও কতজনের এই নজির আছে, সেটাও দেখার বিষয়।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.