ব্রতদীপ ভট্টাচার্য ও অরিজিৎ গুপ্ত: অমরনাথের জয়ধ্বনি দিয়ে যাঁরা দুর্গম পাহাড়ে চড়েছিলেন, বৃহস্পতিবার তাঁদের অনেকেই ফিরেছেন কফিনবন্দি হয়ে। ধসের কবলে পড়ে কারও প্রাণ গিয়েছে। কেউ বিরূপ আবহাওয়ার শিকার। সেই তালিকায় এবার জুড়ল এক বাঙালির নামও। অমরনাথ দর্শনে গিয়ে প্রাণ হারালেন বালির দুর্গাপুর মাকালতলার বাসিন্দা সঞ্জয় সাঁতরা। অমরনাথ দর্শন করে বৃহস্পতিবার চন্দনওয়াড়ি ফিরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। সঞ্জয়বাবুকে নিয়ে অমরনাথ যাত্রায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩।
[ভরতি প্রক্রিয়াকে ঘিরে সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজে উত্তেজনা, পড়ুয়াদের বিক্ষোভ]
যাত্রা শুরুর দিন থেকে রুদ্ররূপ ধারণ করেছে প্রকৃতি। তার দরুন ক্রমশ বিপদসংকুল হয়ে উঠেছে যাত্রাপথ। যা দেখে মনে হচ্ছে, এবছর যেন ভক্তদের দর্শন দিতে চাইছেন না অমরনাথ নিজেই। তাই হয়তো ন’দিন পরও পহেলগাঁও, চন্দনওয়াড়ি, শেষনাগের আকাশে জমে থাকা মেঘ একটুও সরেনি। মাঝে তিন দিন বৃষ্টি কিছুটা কমলেও, মঙ্গলবার রাতে চার ভক্তের প্রাণহানির পর ফের দরজা বন্ধ হয়ে যায় অমরনাথের। বালতাল থেকে অমরনাথের গুহায় যাওয়ার পথে ধস নেমে মৃত্যু হয় চার যাত্রীর চন্দনওয়াড়ির অন্য পথে যারা যাত্রা করেছিলেন, প্রকৃতির রোষ থেকে রেহাই পাননি তাঁরাও। শেষনাগ পার করতেই বরফ দিয়ে তাঁদের পথ আটকায় প্রকৃতি। ক্রমশ কমতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। যার প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। সে বাধাও টপকে যাঁরা পবিত্র গুহার দিকে এগিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জন দুর্ঘটনার কবলে পড়েন সংগম টপের কাছে। বরফ আর কাদায় বেসামাল হয়ে এক সওয়ারি বৃদ্ধাকে নিয়ে খাদে পড়ে যান এক পালকি চালক। বুধবার থেকে যাত্রা স্থগিত করে দেওয়া হয়। তবে মাঝ পথে আটকে থাকা পুণ্যার্থীরা থামেননি। দুর্যোগ মাথায় নিয়েই অমরনাথ দর্শন করেছেন। তবে তাঁরা সবাই ফিরে আসেননি। দুর্যোগের কামড়ে অসুস্থ হয়ে ফেরার পথে প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন। তাঁদের মধ্যেই একজন বালির বাসিন্দা বছর
পঞ্চাশের সঞ্জয়বাবু।
[পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদ করে প্রহৃত যুবক, চাঞ্চল্য উত্তরপাড়ায়]
স্ত্রী, ভাগনে-সহ এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে অমরনাথ দর্শনে গিয়েছিলেন তিনি। অমরনাথ দর্শন করে এই দুর্যোগের মধ্যেই ফিরে আসেন ক্যাম্পে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়িতে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন সঞ্জয়বাবু। তখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে তাঁর। সেকথা পরিবারের লোকেদের জানিয়েছিলেন তিনি। এর পরেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সঞ্জয়বাবুকে নিকটবর্তী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই সঞ্জয়বাবুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার ভোরে এই দুঃসংবাদ এলাকায় এসে পৌঁছয়। মাকালতলায় বাড়িতে রয়েছেন সঞ্জয়বাবুর বৃদ্ধ বাবা, মা ও দুই স্কুল পড়ুয়া কন্যা। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়নি তাঁদের। প্রতিবেশীরা সঞ্জয়বাবুর সহযাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে সঞ্জয়বাবুর দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়৷ সাহায্যের জন্য যাওয়া হয় স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও৷ অবশেষে ফিরিয়ে আনা সম্ভবপর হয় তাঁর দেহ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.