ধীমান রায়: দুহাতেই কোনও আঙুল নেই। হাতের কব্জির থেকে সামান্য একটু অংশ রয়েছে। না কোন দুর্ঘটনায় নয়, জন্মগতভাবেই আঙুলহীন দুটি হাত। কিন্তু, একটি হাতেও পেন ধরার ক্ষমতা নেই বলে থেমে থাকেনি অমিয়র পড়াশোনা। মনের জোরের উপর নির্ভর করেই সে এগিয়েছে অনেকটা। দুহাতের কব্জির ফাঁকে কলম ধরেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা অমিয় দাস। কেতুগ্রামের কাঁদরা জ্ঞানদাস স্মৃতি বিদ্যামন্দির পরীক্ষাকেন্দ্রে সিট পড়েছে তার।
গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কৃষক শ্যামল দাসের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের মধ্যে ছেলে অমিয়ই বড়। তার এক বোন প্রিয়া পড়ে নবম শ্রেণিতে আর ছোট বোন রিয়া ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। শ্যামলবাবু জানান, তাঁর ছেলে জন্মগত প্রতিবন্ধী। দু’হাতেই কোনও আঙুল নেই। কিন্তু, তাতেও ভেঙে পড়েনি। ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে।
গোপালপুর আর ডি এম ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ও অমিয়র সহপাঠী শান্তনু হাজরা বলে, “অমিয় প্রতিবন্ধী হলেও ওর মনের জোর প্রচুর। আর পড়াশোনাতেও আগ্রহ রয়েছে। যে রকম পরিস্থিতিই আসুক না কেন ওকে কোনওদিন হতাশ হতে দেখিনি।”
[অদম্য জেদ, বাবার কাঁধে চেপেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে কালনার গৌরব]
অমিয় বলে, “আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বাবা-মা আমাকে নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকেন। কিন্তু, আমি কিছু করে দেখাতে চাই।”
অমিয়র পরীক্ষাকেন্দ্র যেখানে পড়েছে সেই কাঁদরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, “অমিয় দাসের পরীক্ষা দিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য আমরা সবসময় নজর রাখছি।”
মনের জোরই যে সফলতা অর্জনের আসল চালিকাশক্তি তা আগেও বারবার প্রমাণ করেছেন অনেকে। মানসিক, শারীরিক বা আর্থিক কোনও বাধাকেই গুরুত্ব না দিয়ে পূরণ করেছেন নিজেদের স্বপ্ন। অমিয় দাসও যে আগামীদিনে নিজের লক্ষ্যপূরণ করতে পারবে তার ইচ্ছাশক্তি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.