অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: পেট্রল-ডিজেলের লাগাতার দাম বৃদ্ধিতে নাজেহাল আমজনতা। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে যখন কলকাতা ও শহরতলিতে আন্দোলনে নেমেছেন বেসরকারি বাসমালিক, তখন রেলশহর খড়গপুরে খোলা বাজারেই বিকোচ্ছে পেট্রল ও ডিজেল! রাস্তার পাশে টেবিল পেতে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি কারবার। আর পেট্রল পাম্প থেকে যা বিক্রি করা হচ্ছে, তা আসলে সাদা গুঁড়ো মেশানো কেরোসিন তেল।
[ সার্ভিস সেন্টারের আড়ালে রান্নার গ্যাসের অবৈধ কারবারের পর্দাফাঁস]
নিয়ম অনুয়ায়ী, গাড়ি ছাড়া পেট্রল বা ডিজেল বিক্রিই করা যায় না। তবে দুর্ঘটনা বা অন্যকোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সেই নিয়মের ছাড় আছে। কিন্তু, রাস্তার পাশে টেবিল পেতে বোতল ভরে পেট্রোপণ্য বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তাহলে খড়গপুরে কীভাবে চলছে এই বেআইনি কারবার? জানা গিয়েছে, পরিশোধানাগার থেকে যখন ট্যাঙ্কারে ভরে পেট্রল ও ডিজেল পাম্পে নিয়ে আসা হয়, তখনই তা একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন ট্যাঙ্কার চালকদের একাংশ। এমনকী, পেট্রল পাম্প থেকে চোরাপথে খোলা বাজারে পাচার হয়ে যায় জ্বালানি। পরে সেটা পূরণ করতে এমটিটি নামের সাদা গুঁড়ো মেশানো সমপরিমাণ কেরোসিন (এমটিটি মেশালে নীল রঙয়ের কেরোসিন স্বচ্ছ আকার ধারণ করে) ট্যাঙ্কারে ভরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে খড়গপুরের বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনে। শহরের এক গ্যারাজের কর্মী জানিয়েছেন, ‘‘কখনও মোটরবাইকে আবার কখনও ড্রামে করে তেল আনি। পাম্পের লোকদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া আছে।’’ বস্তুত, খড়গপুরে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো গড়িয়ে ওঠেছে অবৈধ পেট্রল ও ডিজেলের ‘দোকান’। পশ্চিম মেদিনীপুরের দেবাশিস সেনাপতির কথায়, ‘‘হেলমেট পরে পাম্পে গিয়ে তেল আনার প্রয়োজন নেই। পাড়ার যে দোকানে বাইক মেরামত করি সেখানেই একটু বেশি টাকা দিয়ে গাড়িতে তেল ভরাই।’’
এই কেরোসিন মেশানো পেট্রল বিক্রিতে লাভ-ক্ষতির হিসেবটা ঠিক কী? লিটারে প্রায় ১৫ টাকা প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এক লিটার পেট্রলের বাজারদর ৮৫ টাকা আর প্রতি লিটার কেরোসিনের দাম ৭০ টাকা। ভেজাল পেট্রল ব্যবহারে যানবাহনগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট হচ্ছে। শুধু কি তাই! তথ্য বলছে, বেআইনি তেলের কারবারের জন্য বছরে খুব কম করে হলেও তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়ছে সরকার। অথচ সব জেনেও প্রশাসন নির্বিকার বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
[ উলুবেড়িয়ায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, আশঙ্কাজনক ব্যবসায়ী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.