ছবিতে কৃষ্ণসায়রে মরা কচুরিপানা সাফাইয়েক কাজ চলছে, ছবি : মুকুলেসুর রহমান।
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: তিনবছর ধরে সংস্কার হয়নি। তার ফলে কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণসায়র জলাশয়। সেই কচুরিপানা সাফাই করতে ক্ষতিকারক কীটনাশক প্রয়োগে কৃষ্ণসায়রের জল কালো হয়ে গিয়েছে। শুধু রং বদলই নয়, জলাশয়টি দূষিত হয়ে যাওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। অভিযোগ, প্রায় কোটি টাকার মাছ মরে যাওয়ার খবর রয়েছে। এদিকে মরা মাছ সায়রের জলেই পচে গিয়েছে। দুর্গন্ধ ছড়াতেই স্থানীয়দের নাভিশ্বাস উঠেছে। গোটা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগের উঠেছে। বিভিন্ন মহলের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এই অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার মৎস্য দপ্তরও খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। শীতকালে এই জলাশয়ে প্রচুর পরিযায়ী পাখিও আসে। জল দূষিত হওয়ায় তাদেরও বিপদে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। অভিযোগ, কচুরিপানা সাফাই নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বৈঠকও হয়। সেখানে মৎস্য দপ্তর কীটনাশক প্রয়োগ না করে পানা সাফাইয়ের পরামর্শ দেয়। কিন্তু তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ। তার ফলেই এই বিপত্তি ঘটেছে। যদিও মাছ মরার খবরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার দীপেন্দ্রনাথ দে-র সঙ্গেও যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলতে অস্বীকার করেন তিনি। জেলার মৎস্য সহ-অধিকর্তা দেবাশিস পালুই জানান, এই ধরণের ঘটনার কথা লোকমুখে তিনি শুনেছেন। কোনও অফিসিয়াল চিঠি বা অভিযোগ কিছু পাননি। তবুও তাঁরা ঘটনার খোঁজ নেবেন। তিনি বলেন, “অফিসিয়ালি কিছু জানতে না পারলেও আমরা বসে থাকব না। উপাচার্যর সঙ্গে আমি দেখা করে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নেব।”
আগে কৃষ্ণসায়রে মাছ চাষের বরাত পেত বেসরকারি সংস্থা। বছর তিনেক ধরে তা বন্ধ রয়েছে। সেই বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলাও চলছে। এদিকে দীর্ঘদিন মাছ চাষ বন্ধ থাকায় সায়র কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। সম্প্রতি জলাশয়ের পানা সাফাইয়ের উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত আগস্টে পানা সাফাইয়ের জন্য দরপত্রও ডাকা হয়। সেপ্টেম্বরের প্রথমেই সেই কাজে একটি বেসরকারি সংস্থাকে বরাতও দেয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। পানা সাফাইয়ের জন্য ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। অভিযোগ, সেই ঠিকাদার সংস্থা পানা সাফাইয়ের জন্য কীটনাশক স্প্রে করে। যার ফলে পানাগুলি শুকিয়ে মরে যায়। কিন্তু তা করতে গিয়ে সায়রের জল দূষিত করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে।
বলা বাহুল্য, মৎস্য দপ্তরের নিয়মানুসারে ওই ধরণের কীটনাশক পুকুরের পানা বিনষ্টের জন্য ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা তাই-ই ব্যবহার করে। এরে জেরে সায়রের জল দূষিত করার পাশপাশি মাছেরও বড়সড় ক্ষতি হয়েছে। তবে মাছ মরার বিষয়টি জেলা মৎস্য দপ্তর খতিয়ে দেখছে। দপ্তরের আধিকারিকদের মতে, অনেক সময় অর্গানিক লোড-এর ফলে কচুরিপানাতে পচন ধরে। এজন্যও দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। তবে কৃষ্ণসায়রে যাই ঘটে থাকুক সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেবেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.