সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে গোপালের জন্মদিন। তালের ফুলুরি থেকে নানা পদের সুগন্ধ গ্রামগঞ্জের বাতাসে। পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে সেই গোপালই ভরসা জয়ন্তর। জন্মাষ্টমীর দিন কৃষ্ণ সেজে গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে শোনালেন কৃষ্ণনাম। অনেকেই দু’হাত ভরে যথাসাধ্য তুলে দিলেন জয়ন্তকে।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের মোসগড় গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত ভূমিজ। বছরে অন্য সময় দিনমজুরি করেন। তবে তাতে সংসার চলে না ঠিকমতো। তাই দেবদেবীর বেশ ধরেই রুটিরুজির ব্যবস্থা করেন। বিভিন্ন দেবদেবীর পুজোর দিন সংশ্লিষ্ট দেবদেবীর বেশে গ্রামগঞ্জে গৃহস্থ বাড়িতে হাজির হন। শুক্রবার ছিল জন্মাষ্টমী। এদিন জামালপুরের বিভিন্ন গ্রামে শ্রীকৃষ্ণর বেশে হাজির হন বহুরূপী জয়ন্ত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শোনান কৃষ্ণের নামগান। তারপর ঝোলা ভরেন হাসিমুখে গৃহস্থের তুলে দেওয়া অর্থ, চাল, অনাজপাতি দিয়ে। দিনের শেষে জামালপুরে ঝুলনের মেলাতেও হাজির হন। কৃষ্ণরূপী জয়ন্ত মনোরঞ্জন করেন মেলায় আগত দর্শনার্থীদেরও। তারপর ঝোলা ভরে গেলে ধরেন বাড়ির পথ। অন্তত কিছুদিন তো চিন্তামুক্ত থাকবেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারবেন। এতেই আপাতত নিশ্চিন্ত জয়ন্ত।
দুঃস্থ পরিবারের ছেলে জয়ন্ত। ছোট থেকেই রোজগার শুরু করেন। তা দিয়ে কোনওক্রমে দিন চলে। ছোট থেকেই বিভিন্ন দেবদেবীর রূপ ধরে মনোরঞ্জন করে অর্থ রোজগারের পথও বেছে নেন তিনি। জয়ন্ত জানান, তিনি সব দেবদেবীরই ভক্ত। সকলেরই পুজো করেন। আর যেদিন যে দেব বা দেবীর পুজোর দিন, সেদিন তাঁদের রূপ ধরেন। বহুরূপী হয়ে হাজির হন গ্রামে গ্রামে।
আগে গ্রামে গাজন-সহ বিভিন্ন উৎসবের সময় প্রচুর বহুরূপীর দর্শন মিলত। কচিকাচাদের বিনোদনে বহুরূপীর জুড়ি মেলা ভার ছিল। কিন্তু এখন বহুরূপী হারাতে বসেছে গ্রামবাংলা। সংখ্যায় অনেক কমে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু পুরনো এই ধারা অব্যাহত রাখতে প্রায় রোজই সেজে বেরোচ্ছেন জয়ন্তদের মতো কিছু মানুষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.