Advertisement
Advertisement
Purulia

টুরগা প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বাইক মিছিল পুরুলিয়ায়, ডিএফওকে ঘেরাও গ্রামবাসীদের

'গ্রামসভা'র অনুমতি ছাড়া গ্রামে ঢোকা যাবে না বলে ডিএফও-কে হুঁশিয়ারি।

People protest through bike rally against Turga project at Bagmundi, Purulia, gherao DFO
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 27, 2023 9:35 pm
  • Updated:August 27, 2023 9:43 pm  

সুমিত বিশ্বাস,পুরুলিয়া: ‘গ্রামসভা’-র অনুমতি ছাড়া অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গল ঘেরা গ্রামে ঢুকতে পারবেন না। পুরুলিয়ার (Purulia) বাঘমুন্ডি ব্লকের পুরানো টারপানিয়া গ্রামে পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও সহ দুই রেঞ্জ আধিকারিককে ঘেরাও করে গ্রামের মানুষজন তা জানিয়ে দেন। পুরানো টারপানিয়া এবং দুলুগবেড়া গ্রামের মানুষজনদের রীতিমতো বিক্ষোভের মুখে পড়েন পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও কার্তিকায়েন এম, বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলের আধিকারিক শাহনাজ ফারুক আহমেদ ও অযোধ্যা বনাঞ্চলের আধিকারিক মনোজ মজুমদার। স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় কাঠের স্তম্ভ ফেলে প্রথমে আধিকারিকদের গাড়ি আটকে দেন। তারপর তাদেরকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান।

অভিযোগ, ডিএফও (DFO) এবং ওই দুই বনাঞ্চলের আধিকারিক-সহ বনকর্মীরা রাজ্যের প্রস্তাবিত টুরগা প্রকল্পস্থল ঘুরে দেখতে গিয়েছিলেন। বিকাল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত তাঁরা ঘেরাও হয়ে থাকেন ওই গ্রামে। পরে বাঘমুন্ডি (Bagmundi)থানার পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁরা ঘেরাও মুক্ত হন। এই ঘটনায় পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও বাঘমুন্ডি থানায় শনিবার রাতেই সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগ করেন। রবিবার রাতে ডিএফও বলেন, “গ্রামসভা বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা প্রশাসনের স্বীকৃত নয়। ওই এলাকায় আমরা জঙ্গল সুরক্ষার জন্য পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে VHPর মিছিল, হরিয়ানার নুহ-তে ফের বন্ধ ইন্টারনেট, জারি কারফিউ]

ওই ঘেরাও-বিক্ষোভের ভিডিও (সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন) শনিবার রাত থেকেই ভাইরাল (Viral Video) হতে শুরু করে। ওই ভিডিওতে গ্রামবাসীরা ডিএফও-র পদ, নাম জানতে চান। কতদিন হল তিনি পুরুলিয়া বনবিভাগে কাজ করছেন সেটাও জানেন বিক্ষোভকারীরা। তখন ডিএফকেও বলতে শোনা যায়, তিনি বলরামপুর, ঝালদা বনাঞ্চলের মতো এই এলাকাতেও জঙ্গল পরিদর্শনে এসেছেন। পুলিশকে দেওয়া অভিযোগ পত্রেও তিনি লিখেছেন, কাঠের স্তম্ভ দিয়ে তাঁর যানবাহন আটকে নিগ্রহ করে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়। তিনি একজন ডিএফও হিসাবে তাঁর এলাকায় যে-কোনো সময় জঙ্গল পরিদর্শন করতে পারেন।

[আরও পড়ুন: ফোন করার বার্তা দিয়ে Whatsapp মেসেজ! জবাব দিলেই ঘটতে পারে বিপদ]

২০১৮ সাল থেকেই বাঘমুন্ডির অযোধ্যা পাহাড়ে টুরগা পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প নিয়ে প্রকৃতি বাঁচাও সংগঠনের আন্দোলন চলছে। গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পের দরপত্র আহবানে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর থেকেই এই প্রকল্প বাতিলের দাবি নিয়ে আন্দোলনরত মানুষজন আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ওই দরপত্র আহ্বান সহ টুরগা প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আগামী ৮ ই সেপ্টেম্বর পুরুলিয়া বনবিভাগের কাছে ঘেরাও ও ডেপুটেশন কর্মসূচি রয়েছে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল এবং প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের। এদিন ডিএফও এবং দুই রেঞ্জ আধিকারিককে ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা অযোধ্যা বনাঞ্চলের আধিকারিক মনোজ মজুমদারকে বলেন, “টাকা খেয়ে খেয়ে মোটা হয়ে গিয়েছেন। আপনি বড় ঘুষখোর।”

ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ঘেরাও-র মুখে পড়লেও ডিএফও গাড়ি থেকে নামছিলেন না।বিক্ষোভকারীরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান, এই বার্তা বাঘমুন্ডি বনাঞ্চল আধিকারিকের কাছে দেওয়ার পর তবেই গাড়ি থেকে নেমে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেই সময়ই গ্রামবাসীরা জানিয়ে দেন, গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া অযোধ্যা পাহাড়ের ঘন জঙ্গল এলাকায় তিনি প্রবেশ করতে পারবেন না। গ্রামসভা অনুমতি দেবে তবেই তিনি প্রবেশ করতে পারবেন। অযোধ্যা পাহাড়ের মানুষজনের অভিযোগ, ডিএফও সঠিকভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন না। ফলত এই এলাকার মানুষের অভাব, অভিযোগ, সমস্যা বিষয়ে তাঁকে জানানো হলেও ভাষাগত সমস্যার কারণে তাঁর কাছ থেকে সেভাবে সাড়া পাওয়া যায় না। ফলে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

কিন্তু টুরগা প্রকল্পের বিরোধিতা করা ওই গ্রামবাসীরা যেভাবে জানালেন যে গ্রামসভার অনুমতি না নেওয়া ছাড়া ডিএফও গ্রামে ঢুকতে পারবেন না, তা ঠিক নয় বলে বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। বনাধিকার আইনে গ্রামসভা থাকলেও তার অনুমতি নিয়ে ডিএফও-র মত সরকারি আধিকারিককে গ্রামে ঢুকতে হবে – এরকম কোনও বিধি নেই। তাছাড়া এ রাজ্যে গ্রাম সংসদ রয়েছে। কিছুদিন আগেই টুরগা প্রকল্পের বিরোধিতা করা মানুষজন অযোধ্যা পাহাড়ের দেওয়ালে লিখেছিলেন, “আগে গ্রামসভা, পরে ভোটসভা।” অযোধ্যা পাহাড়ের অন্যতম সাইট সিয়িং বামনি ফলসের ‘অধিকার’ গ্রামসভার হাতে দিতে হবে এই দাবিও তুলেছেন ওই এলাকার মানুষজন।

পুরুলিয়া বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, টুরগা পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পের প্রথম দরপত্র আহবানে কোন সাড়া না মেলায় দ্বিতীয় দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দ্বিতীয় দরপত্র জমা করার শেষ দিন রয়েছে ৪ সেপ্টেম্বর। টুরগা প্রকল্পে এক কোটির বেশি টাকায় গাছ কাটা, সমীক্ষা, সীমানা দেওয়া সহ একাধিক কাজে আপাতত দুটি প্রকল্পের কাজ করবে বনদপ্তর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement