অর্ণব দাস, বারাসত: দিওয়ালি (Diwali) মানেই আলোর উৎসব। বছরের এই সময়টায় অধিকাংশ বাড়িই সাজিয়ে তোলা হয় চিনা আলোয়। চারপাশের রংবেরংয়ের আলোয় যেন চোখে ধাঁধা লেগে যায়। তবে কয়েকবছর আগেও দিওয়ালিতে সকলের বাড়ি সেজে উঠত মাটির প্রদীপে। হালফিলে তা বিশেষ দেখা যায় না। কিন্তু কলকাতার খানিকটা দূরে দত্তপুকুরে রয়েছে এমন এক গ্রাম, যেখানে প্রতিদিন তৈরি হয় হাজার হাজার প্রদীপ। দিওয়ালির আগে বাহারি চিনা আলোকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত সেখানকার মাটির প্রদীপ।
যশোর রোড ধরে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত পেরিয়ে দত্তপুকুর এলাকায় প্রবেশ করার আগেই রাস্তার দু’পাশে নজর পড়বে বহু ছোট ছোট দোকান। যার সামনে সারি দিয়ে সাজানো মাটির বহু জিনিস। প্রদীপ, মূর্তি, মাটির জলের বোতল থেকে শুরু করে নানা ঘর সাজানোর জিনিস। দোকানের আশেপাশেই রয়েছে একাধিক পাকা বাড়ি। সেখানে একসঙ্গে বসে কাজ করেন শ্রমিকরা। কেউ বানান প্রদীপ, কেউ ছাঁচে ফেলে তৈরি করেন নানা দেবদেবীর মূর্তি।
সারাবছরই ওই ‘প্রদীপ গ্রামে’ চলে মাটির কাজ। সেখানে তৈরি মাটির জিনিস পৌঁছে যায় ভিনরাজ্যে। তবে মূলত দীপাবলির আগে চাপ থাকে প্রদীপ তৈরির। এই সময়টায় রাজ্যে যেমন চাহিদা থাকে প্রদীপের, তেমনই ভিনরাজ্যেও। তবে কয়েকবছর আগের তুলনায় এখন ব্যবসায় অনেকটাই মন্দা। কারণ, বাজার ছেয়ে গিয়েছে চিনা আলো অর্থাৎ বাহারি টুনি, এলইডি বাল্ব। এসবেই এখন ঘর সাজান অধিকাংশ মানুষ। তাই অনেকেই আর কেনেন না প্রদীপ।
চালতাবেড়িয়ার মাটির সামগ্রী তৈরির কারখানার মালিক তথা শিল্পী স্বপন পাল জানিয়েছেন, তাঁদের তৈরি সামগ্রী রপ্তানি করা হয় বিভিন্ন রাজ্যে। তবে ব্যবসা এখন আর আগের মতো নেই। আমজনতার কাছে তাঁর আরজি, যেন প্রত্যেকে চিনা আলো ছেড়ে প্রদীপ কেনেন। তাতে কমবে খরচও। সামনেই কালীপুজো, তাই চূড়ান্ত ব্যস্ত চালতাবেড়িয়ার প্রায় সকলেই। এক শিল্পী ভাস্কর নাইয়া জানিয়েছেন, তাঁরা একেক জন প্রতিদিন চার হাজার প্রদীপ তৈরি করেন। দু’জন থাকলে দশ হাজার। ব্যবসায় মন্দার প্রভাব পড়ছে তাঁদের উপরও। ফলে দিওয়ালির আগে প্রত্যেকেরই আরজি, বিদেশি পণ্য ছেড়ে ‘প্রদীপ গ্রামে’র মাটির প্রদীপেই ঝলমলে হয়ে ওঠুক প্রত্যেকের বাড়ি। তবে ভিনদেশের আলোকে টেক্কা দিতে সবসময় তৈরি চালতাবেড়িয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.