সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘চৈতে খরখর/বৈশাখে ঝড়-পাথর/ জ্যৈষ্ঠে যদি তারা ফুটে/তবে জানবি বর্ষা বটে।’ – একেবারে অকাট্য কথা, সুরে বেঁধে তৈরি হয়েছে মানভূমের বিশেষ লোকগান৷ জ্যৈষ্ঠেই আষাঢ়ের আহ্বান৷ বর্ষার আগমনে এখনও বেশি খানিকটা বিলম্ব৷ কিন্তু সাবেক মানভূমে এই ভরা গ্রীষ্মেই পালিত হয় বর্ষা আহ্বানের রোহিনী পরব৷ আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় নতুন কৃষিবর্ষ।
পুরুলিয়া-সহ মানভূম এলাকায় এই দিনটিতে গ্রামের মানুষজন মাটি তুলে ঘরে নিয়ে যান। সেই মাটির সঙ্গে আমন ধানের বীজ মিশিয়ে চাষের জমিতে বীজতলা করেন। এই এলাকার মানুষের বিশ্বাস, এই দিন চাষের জমিতে বীজ ফেললে ফসলে পোকা লাগে না। ফলন ভাল হয়। যদিও এর কোনও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নেই। তবুও মাটির উৎসব রোহিনী পরবে প্রতি বছরের মতো এবারও মেতে উঠল তামাম পুরুলিয়া, লাগোয়া ঝাড়খণ্ড। যা একসময় বিহারের অধীনে থাকা মানভূম জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
লোকসংস্কৃতি গবেষক সুভাষ রায় বলেন, ‘এই এলাকার মানুষের বিশ্বাস, জ্যৈষ্ঠ মাসের তেরো তারিখ চাষের জমিতে বীজ ফেললে ফসল ভাল হয়। তাই এই দিনটি রোহিন বা রোহিনী পরব নামে পরিচিত। এদিন থেকে এই এলাকায় কৃষিবর্ষের শুরু হল।’ আর এই কৃষিবর্ষকে ঘিরে নানা নিয়ম,সংস্কার রয়েছে এই মানভূমে। এদিন বাড়ির সামনে গোবরের প্রলেপ লাগান মহিলারা। যাতে কোনও বিষধর কীট–পতঙ্গ ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া সবুজ রঙের ‘আষাঢ়া’ নামে এক ধরনের ফলও খান। এই ফল খেলে শরীর বিষমুক্ত থাকে বলে বিশ্বাস৷ এইদিন থেকে কৃষিবর্ষের শুরু হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষজনকে এবার চাষাবাদের কাজে বেশিরভাগ সময় মাঠেঘাটেই থাকতে হবে। ফলে কোনও কীটপতঙ্গ কামড়ালে যাতে তার বিষ শরীরে দানা বাঁধতে না পারে৷ সেক্ষেত্রে ‘আষাঢ়া’ ফল অ্যান্টিবায়োটিকের মত কাজ করে বলে বিশ্বাস এই এলাকার বাসিন্দাদের।
শুধু তাই নয় এই রোহিন পরবে গাঁ–গঞ্জের কচিকাঁচারাও মেতে ওঠে। মুখে কালি মেখে বাঁদর,হনুমান সেজে ঢাক-ঢোল নিয়ে গ্রামের রাস্তায় নেমে পড়ে ছড়া কাটল – ‘আসলা পাতের দশনা/ করলা পাতের দনা/ দানায় দানায় মদ পিয়ালো/ হিললো কানের সোনা।’ বর্ষার আগমনে রোহিনীতেই যেন একপশলা বৃষ্টির আনন্দ। যে বৃষ্টি রুখাশুখা মানভূমে ভরিয়ে তুলবে শ্যামলিমায়৷
ছবি: সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.