Advertisement
Advertisement
Hooghly

ভোটব্যাঙ্ক নেই, তাই বিস্মৃত মধুসূদন গুপ্ত! শল্যচিকিৎসার পথিকৃতের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি

তথ্যচিত্র তৈরি করে পণ্ডিত মধুসূদন দত্তকে প্রচারের আলোয় আনে কিশোর অভিজ্ঞান দাস।

People of Hooghly want to make memorial in the name of Dr. Madhusudan Gupta | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:January 11, 2024 2:02 pm
  • Updated:January 11, 2024 2:02 pm  

সুমন করাতি, হুগলি: প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল আমজনতার উদ্দেশে। শল্যচিকিৎসক (Surgery) থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, রাজনৈতিক নেতা এমনকি পথ চলতি সাধারণ মানুষকেও। ১০ জানুয়ারি ভারতে আধুনিক চিকিৎসার জন্য স্মরণীয় কেন? সব ক্ষেত্রেই উত্তর এসেছে, ‘জানি না’ বা ‘মনে করতে পারছি না’। অথচ, ভারতে এই দিনেই বাঙালি এক চিকিৎসকের হাত দিয়ে সূচনা হয়েছিল আধুনিক শল্যচিকিৎসা ব্যবস্থার। হুগলির (Hooghly)  বৈদ্যবাটির বাসিন্দা পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত ১৮৩৬ সালের ১০ জানুয়ারি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেন। ভারতে গোড়াপত্তন হয় আধুনিক চিকিৎসার (Modern Treatment)। যে মানুষটির যুগান্তকারী পারদর্শিতায় ভারতে আধুনিক চিকিৎসায় বিপ্লব আসল, তাঁকেই বেমালুম ভুলে গেল বঙ্গবাসী!

হুগলি জেলার এক প্রখ্যাত শল্যচিকিৎসক অনির্বাণ সামন্ত (নাম-পদবি পরিবর্তিত) মাথা চুলকে জানালেন, “১০ জানুয়ারি স্মরণীয় কেন, মনে করতে পারছি না তো।” প্রশ্নটা শুনে জেলার নামজাদা এক সরকারি স্কুলের জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষকের ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’র অবস্থা! ব্যান্ডেলের নামকরা বেসরকারি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী ভুরু কুঁচকে বলল, “আই ডোন্ট নো।” জেলার রাজনৈতিক নেতাদের অবস্থা তথৈবচ। জেলা বিজেপির স্থানীয় এক দাপুটে নেতা অকপটে স্বীকার করলেন “জানি না। একটু বলে দিন না প্লিজ।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘ইডির বিরুদ্ধে এখনই পুলিশি পদক্ষেপ নয়’, সন্দেশখালি কাণ্ডে নির্দেশ হাই কোর্টের]

তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “বলতে পারব না। এমন দিনে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নির্দেশ নেই।” এসব জেনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক বাম নেতার আক্ষেপ, “যদি পণ্ডিত মধুসূদনের নামে ভোটব্যাঙ্ক থাকত, তবে ‘ডান-বাম-রাম’ – সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ত।” অথচ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এই দিনটি পালিত হয় ‘মেডিক্যাল এডুকেশন ডে’ হিসেবে। কিন্তু এর কোন আঁচ দেখতে পাওয়া যায় না জেলায়, রাজ্যে কিংবা দেশে। তাঁর নামাঙ্কিত একটা ছোট্ট ব্লক হাসপাতালও খুঁজে পাওয়া যায় না রাজ্য জুড়ে।

পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়ে প্রচারের আলোয় এনেছে হুগলির কিশোর অভিজ্ঞান দাস।

পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তকে আত্মবিস্মৃত বাঙালি ভুলে গেছে ঠিকই। হুগলিরই আরেক কিশোরের চেষ্টায় সম্প্রতি পণ্ডিত গুপ্তের কৃতিত্ব দেশজুড়ে আবার প্রচারের আলোয় এসেছে। হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র অভিজ্ঞানকিশোর দাস সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছে। যা ইতিমধ্যে ১৮ টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে বছর সতেরোর এই কিশোর পরিচালক। ভারত সরকারের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক আয়োজিত একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও উচ্চ প্রশংসিত হয় এই তথ্যচিত্রটি। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) ফিলাডেলফিয়া যুব চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ পেয়েছিল অভিজ্ঞান। সেখানে তার নির্মিত ‘আধুনিক ভারতের সুশ্রুত পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত’ জিতে নেয় সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার। অভিজ্ঞানের এই সাফল্যের হাত ধরেই আবার পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তকে নিয়ে চর্চা শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়, সংবাদপত্রে।

[আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপির লোকসভা কমিটি ঘিরে চরমে কোন্দল! আরও কোণঠাসা দিলীপ?]

অভিজ্ঞানের কথায়, “পণ্ডিত গুপ্ত শুধুমাত্র একজন যুগান্তকারী চিকিৎসকই ছিলেন না। রাজা রামমোহন রায়ের মতন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। খুবই পরিতাপের বিষয়, যে তার মতন স্মরণীয় মহামানবদের আমরা ভুলেই গেলাম! পণ্ডিত গুপ্তের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে, তার নামাঙ্কিত অন্তত একটা বড় হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক। এই আবেদন আমি রাখতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।” অতএব, ভোটব্যাঙ্ক বড় বালাই, জানান দিচ্ছে রাজ্যের সবাই!

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement