Advertisement
Advertisement

Breaking News

Manasa Puja 2023

মনসা পুজোতেই দুর্গাপুজোর ধুম! ঝাপান গানে দেবী আরাধনা শুরু তেহট্টের এই গ্রামে

মনসা পুজো উপলক্ষে পাঁচদিনের মেলা বসে এই গ্রামে।

People in this village of Nadia celebrate Manasa Puja as special as Durga Puja | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 18, 2023 7:28 pm
  • Updated:September 30, 2023 3:08 pm  

রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: দুর্গা নয়, মা মনসার পুজোই (Manasa Puja) শারদোৎসবের সমান। ভাদ্রের শেষে তাই আনন্দে মেতে ওঠেন নদিয়ার তেহট্টের বেতাই কাঠমিল পাড়ার বাসিন্দারা। মনসাকেই জাগ্রত দেবীরূপে পুজো করা হয়। তিথি অনুযায়ী, প্রত্যেক বছর ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে পুজো হয় মা মনসার। এই মনসা পুজোকেই গ্রামের মানুষ ‘দুর্গাপূজা’ বলে মনে করেন। কেনা হয় নতুন পোশাক, শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে আসে মেয়েরা। পূজা উপলক্ষে পাঁচদিনের মেলা বসে। সেই উপলক্ষে প্রত্যেকটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা বেড়ে যায়। একেবারে যেন দুর্গাপুজোর (Durga Puja) আমেজ।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, অনেক কাহিনি কথিত আছে এই পুজোকে ঘিরে। এই পুজো কবে শুরু হয় সঠিকভাবে তথ্য পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এই পূজা শুরু হয় বাংলা ১৩৬৫ সালে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সামান্য কিছু পরিবারের বসবাস ছিল তেহট্ট (Tehatta) থানার বেতাই পলাশির মোড় সংলগ্ন বটতলা এলাকায়। বর্তমানে এই গ্রাম বেতাই বটতলা কাঠমিলপাড়া নামে পরিচিত পেয়েছে।

Advertisement

বহুদিন আগে বন-জঙ্গল ঘেরা এই গ্রামে বিষধর সাপের উপদ্রব প্রচণ্ড বেড়ে যায় এবং যত্রতত্র ঘুরে বেড়াত বিষধর সাপ (Snakes)। সেই সময় গ্রামের বেশ কয়েকজন সাপের দংশনে মারা যায় বলে তাঁরা জানান। এই ঘটনার পরে গ্রামবাসীদের অনুমান মা মনসা তাঁদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন, যার ফলে সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সেই বছর মা মনসাকে শান্ত করতে স্থানীয় বাসিন্দারা সকলে একত্রিত হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে ভাদ্র সংক্রান্তিতে মাটির বেদিতে মা মনসার মূর্তি গড়ে পদ্মপুরাণ গানের একটা অংশ ‘ঝাপান গান’ গেয়ে বেল গাছের নিচে কলাপাতার ছাউনি দিয়ে মণ্ডপ বানিয়ে পূজা শুরু করেন। পুরোহিত ছিলেন রামকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়। তখন থেকে চলে আসছে এই পূজা। কথিত আছে, পূজা শুরুর পরে গ্রামে আর সাপের উপদ্রব দেখা যায়নি। এই পূজার পুরোহিত রামকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় পুত্র চন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের কয়েক মাস আগে মৃত্যু হওয়ায় এ বছর পূজার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অন্য একজন পুরোহিত।

[আরও পড়ুন: ‘সত্যিকারের হিন্দু হলে…’, মন্দিরে কালীপুজোর ছবি দিতেই খোঁচা খেলেন মিমি!]

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি কালু হালদার বলেন, ”আমি তখন ছোট, এই পুজো কবে কীভাবে শুরু হয়েছিল সেটা জানা না গেলেও গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিদের থেকে জেনেছি, আজ থেকে ৬৫ বছর আগে গ্রামে খুব সাপের উপদ্রব শুরু হয়েছিল। জনবসতি ছিল খুবই কম, এলাকা ছিল জঙ্গলে ঢাকা, হিংস্র পশুর থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল সাপের আতঙ্ক। গ্রামবাসীদের ধারণা ছিল কোনও কারণে মা মনসা রুষ্ট হয়েছে। তাঁকে শান্ত করতে বর্তমান পাকা মণ্ডপ থেকে কিছুটা দূরে একটি বেল গাছের নিচে শুরু হয় মা মনসার পুজো। তারপর থেকে লোকাচার মেনে হয়ে আসছে এই পূজা।” কালক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পুজোতেও লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া।

[আরও পড়ুন: ‘বিজেপির সঙ্গে জোট নেই’, গেরুয়া শিবিরকে অস্বস্তিতে ফেলে মন্তব্য AIADMK নেতার]

বারোয়ারির সম্পাদক মিহির বসাক ও অন্যতম সদস্য প্রসেনজিৎ হালদার বলেন, ”দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে গ্রামের বজ্রনাথ বসাক, শংকর হালদার, ঝড়ু হালদারা মা মনসা পূজো করে এসেছেন। বর্তমানে তারা কেউই আর বেঁচে নেই। তাঁদের অনুপ্রেরণায় মহাসমারোহে এই পুজো হয়ে আসছে।” পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে পাঁচদিনের মেলা বসে, থাকে আলোকসজ্জা। মূল মূর্তি-সহ ২৮টা মূর্তি সহকারে এই পুজো হয়। প্রত্যেকটা মূর্তি মা মনসা ও চাঁদ সওদাগরের গল্প কাহিনি অবলম্বনে তৈরি। পুজোর বিশেষ আকর্ষণ সংসারের মঙ্গল কামনায় গ্রামের মহিলারা উপোস থেকে মায়ের চরণে অঞ্জলি দেন। গ্রামের মহিলাদের দাবি, দুর্গাপূজা নয়, মা মনসার পূজাকে তারা বড় পুজো ভেবে আনন্দ উপভোগ করেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement