ধীমান রায়, কাটোয়া: সন্তানের কাছে জগতের মধুরতম, নিরাপদ আশ্রয়ের নাম – মা। যতক্ষন পর্যন্ত শিশু তার মায়ের কোলে থাকে, ততক্ষণ তার না থাকে বিপদের আশঙ্কা, না থাকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়।নিজের জীবন বিপন্ন করে মা সন্তানের জীবন রক্ষা করতে পিছপা হন না। আর সেই দুধের শিশু যখন বুঝতে পারে, মা তার নিথর, প্রাণহীন, তখন আকস্মিকতার ঘোর কিছুতেই কাটে না। এমনই বুকফাটা দৃশ্যের সাক্ষী রইল কাটোয়ার একাইহাট।
রাস্তায় পড়ে থাকা হনুমানের মৃত শরীরের উপর উঠে, দু হাতে আঁকড়ে ধরে বারবার জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে ছোট্ট শাবক। মায়ের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আকুল হয়ে বুঝতে চাইছে, মায়ের ঘুম কখন ভাঙবে। কিন্তু মায়ের যে আর সাড়া দেওয়ার উপায় নেই। কুকুরদের আক্রমণ থেকে সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে তার নিজের প্রাণটাই যে চলে গিয়েছে। খাজুরডিহি পঞ্চায়েত এলাকার একাইহাটের ঘটনার পরবর্তী দৃশ্য সামান্যতম সংবেদনশীল মানুষকেও স্পর্শ করতে বাধ্য।
[মানবিকতার নজির, কুয়ো থেকে পথ কুকুরকে উদ্ধার করলেন স্থানীয়রা]
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিপন বারুই জানিয়েছেন, এদিন বিকেল তিনটে নাগাদ একাইহাটে একটি সরষে খেতে সন্তানকে কোলে নিয়ে খাবারের সন্ধানে গিয়েছিল হনুমানটি। জমিতে যাওয়ার পর মায়ের কোল থেকে নেমে আশেপাশে ঘুরে কচি পাতা সবে খেতে শুরু করে শাবকটি। তখনই দুটি কুকুর তেড়ে যায় খুদে হনুমানের দিকে।শাবক ছুটে মায়ের কোলে উঠে পড়ে। রিপনের কথায়, ‘কুকুর দুটো কেবল ছোট হনুমানের দিকেই তেড়ে যাচ্ছিল। মা নিজেকে ঢালের মত ব্যবহার করে সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। কাছাকাছি বড় গাছ ছিল না। তাই গাছে উঠে আত্মরক্ষার সুযোগ ছিল না’। এরপর কুকুরের দল ছানাকে ছেড়ে মা হনুমানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পিঠের বেশ কিছুটা অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়। সেসময় আশেপাশের বাসিন্দারা গিয়ে কুকুর দুটোকে তাড়িয়ে দেয়। আর রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকে মা হনুমান। কয়েক মিনিট পড়েই মৃত্যু হয়। তবে মায়ের দেহটি আঁকড়ে ধরে আর্তনাদ করে যেতে দেখা গিয়েছে তার সন্তানকে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলাই মণ্ডল শিশু হনুমানটিকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়। আপাতত সেটাই তার আশ্রয়স্থল। কিন্তু মায়ের মতো কোমল কি? বোধহয় না।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.