সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: কোজাগরী পূর্ণিমার আগেই জেগে উঠল ‘লক্ষ্মীর গ্রাম’ খালনা। রবিবার লক্ষ্মীপুজো। তার আগে শনিবার থেকেই উৎসব মেতে উঠেছেন হাওড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ এই এলাকা। বাগনান-জয়পুর বাস রুটের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সারা খালনা গ্রাম এখন লক্ষ্মীময়।
[আরও পড়ুন: শিক্ষকের হাতে অন্য রূপে ধরা দিলেন ধনদেবী, সালংকারা লক্ষ্মী নজর কাড়ছে সকলের]
বাঙালির সেরা দুর্গোৎসব নয়, লক্ষ্মীপুজোই এখানকার শ্রেষ্ঠ উৎসব। কয়েকটি দুর্গা পুজো হলেও ধনদেবী লক্ষ্মীই এই গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সারা গ্রামে প্রায় ৪০টি বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো হয়। যার মধ্যে অন্ততপক্ষে ২০টি বিশাল বাজেটের থিমের পুজো রয়েছে বলে জানালেন আমতা কেন্দ্রের বিধায়ক অসিত মিত্র। ফি বছর বন্যায় সর্বস্বান্ত হওয়া কৃষকরা লক্ষ্মীদেবীর কৃপার আশায় আজ থেকে প্রায় আড়াই-তিনশ বছর আগে পশ্চিম খালনা এলাকায় চারুময়ী লক্ষ্মী পুজো করেন। তারপর থেকেই এই গ্রামে লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয় বলেও জানান তিনি।
পরবর্তীকালে শুরু হয় থিমের পুজোও। গত ২৫ বছরে এই থিম পুজোর প্রসার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার মানুষও কৃষি কাজ ছেড়ে স্বর্ণ, লৌহ ও অন্যান্য ব্যবসায় মনোনিবেশ করছেন। আর তার মধ্যে দিয়েই পৌঁছেছেন উন্নতির শিখরে।
তাঁদের বিশ্বাস, লক্ষ্মী দেবীর কৃপাতেই কৃষিকাজে ভরাডুবির পর তাঁরা ব্যবসায় সমৃদ্ধি লাভ করেছেন। তবে এ বছর সোনার মূল্য অত্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণশিল্পে মন্দা দেখা দিয়েছে। খালনার লক্ষ্মী পুজোয় তার প্রত্যক্ষ প্রভাবও পড়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের থেকে এবছর থিমের জৌলুস কিছুটা মলিন হয়েছে বলেও জানান অসিতবাবু। তিনি চান, খালনার তিন দিনের এই ঐতিহ্যমন্ডিত উৎসবের প্রতি রাজ্য সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিক। তাহলে এর আরও শ্রীবৃদ্ধি হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খালনা ক্ষুদিরামতলায় কোহিনূর ক্লাবের পুজো ১৫৩ বছরে পদার্পণ করল। এবার তাঁদের পুজোর থিম ‘দূষণ উষ্ণায়ন আর নয়, হোক সবুজের জয়’। বিভিন্ন মডেল ও মণ্ডপসজ্জার মধ্যে দিয়ে তাঁরা বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জল সংকটের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরেছে। জল সংকটের বার্তা দিয়েছে ৮২ বছর ধরে পুজো করা বলাই স্মৃতি লক্ষ্মী মন্দির। পাশেই করুণাময় কিশোর সংঘের ৯০ বছরের পুজোয় কেদারনাথের শিব মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপটি অসাধারণত্বের দাবি রাখে।
‘আমরা সকল’ পুজো কমিটির উদ্যোগে ৩৮ তম বর্ষ উপলক্ষে পল্লী সংঘের মাঠ জুড়ে ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসেছে সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেনের বল্লাল ঢিপি। হরিসভায় ‘আমরা সবাই’ পুজো কমিটির ৯০ তম বর্ষের পুজোর ভাবনা পরীর দেশে। এখানে লক্ষ্মীদেবী ও তাঁর সহচরীরা পরীর রূপে স্বর্ণে, রত্নে বিভূষিতা। রাজবংশীপাড়ার কালীমাতা তরুণ সংঘের ৯৯ বছরের পুজোর ভাবনা শ্রীকৃষ্ণের কালীয় দমন। কৃষ্ণ রায়তলা পুজো কমিটির ১১৯ বছরের পুজোর ভাবনা মৌমাছির গুঞ্জন। আনন্দময়ী তরুণ সংঘ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিতে গড়ে তুলেছে রবীন্দ্র তীর্থ। তাদের কাচের প্রতিমাটিও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। এছাড়াও মিতালী সংঘ, একতা প্রভৃতি পুজোগুলিও প্রশংসার দাবি রাখে।
আমতা ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল জানান, পুজোর দিন খালনায় প্রায় দু’লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটবে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে সুষ্ঠুভাবে এই উৎসব অতিবাহিত করার জন্য প্রশাসনিক দিক থেকে স্বাস্থ্য শিবির, জলদান শিবির-সহ সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.