স্টাফ রিপোর্টার: ষষ্ঠ দিনেও নোট দুর্ভোগ অব্যাহত৷ টাকা তোলা বা বিনিময়ের জন্য চাহিদা যা, তার চেয়ে ৪০ শতাংশ কম জোগান৷ ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে পাঠানোর জন্য জমিয়ে রাখা আমার আপনার দেওয়া পুরনো, ছেঁড়া, তাপ্পি দেওয়া নোট দিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলার চেষ্টা করছে ব্যাঙ্কগুলি৷ তবে এতে খুব একটা যে লাভ হচ্ছে না তার প্রমাণ রাজ্যজুড়ে একের পর এক অশান্তি৷ হোক না বিক্ষিপ্ত৷ সবই যে অর্থনীতিকেন্দ্রিক৷ কখনও তা ব্যাঙ্ক বা এটিএমের লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের মধ্যে৷ কোথাও ব্যাঙ্ককর্মীর সঙ্গে জনতার৷ চলছে বিক্ষোভ, অবরোধ৷ এবং রবিবার বেলা গড়াতেই বহু ব্যাঙ্কে ও এটিএমে ‘টাকা নেই’ লেখা বোর্ড বুঝিয়ে দিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে৷
কিন্তু ঠিক কত সময় লাগবে তার উত্তর মেলা ভার৷ যদিও ব্যাঙ্কের কাছে নতুন ৫০০ টাকার নোট এসে পৌঁছেছে৷ আজ থেকেই তা মিলতে পারে বিভিন্ন জায়গায়৷ সপ্তাহে টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে ২৪ হাজার টাকা হয়েছে৷ এটিএমে দৈনিক টাকা তোলার ঊধর্বসীমা হয়েছে ২৫০০ টাকা৷আর দৈনিক টাকা বদলের ঊধর্বসীমা চার হাজার থেকে বেড়ে সাড়ে চার হাজার টাকা৷দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলির সব পোস্ট অফিস এবং ব্যাঙ্কের শাখায় ছোট অঙ্কের নোটের পর্যাপ্ত সঞ্চয় এবং সুষ্ঠু সরবরাহ বজায় রাখা নিশ্চিত করতে রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবদের অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷কিন্তু আম জনতার বেড়ে চলা চাহিদার তুলনায় জোগান এখনও কম৷
এরই মধ্যে আবার শনি ও রবিবার খোলা থাকার পর আজ সোমবার বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক৷ অগত্যা খুচরোর আশায় মানুষের ভরসা এটিএমগুলি৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের বাড়তি চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে অধিকাংশ এটিএমই অচল৷ যেগুলি খোলা থাকছে তার সামনেও থাকছে লম্বা লাইন৷ এর উপর বাড়তি মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে দু’হাজারের নোট৷ সবাই চান একশোর নোট৷ দু’হাজার ধরালেই মুখ ব্যাজার৷ কোথায় ভাঙাতে পারা যাবে৷ আসল না নকল তার ধন্দও যে কাটছে না সদ্যভূমিষ্ঠ গান্ধীমার্কা লাল নোট নিয়ে৷ কিন্তু চাহিদামতো বিপুল পরিমাণ একশো পাওয়া কি মুখের কথা৷ কেন, লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন৷ এক্ষেত্রে গৌরী তো রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ তবে?
জানা গিয়েছে, দু’টি পদ্ধতিতে ব্যাঙ্ক তার গ্রাহকের নগদের চাহিদা পূরণ করে৷ প্রথমত, রোজ গ্রাহকদেরই একাংশ যে অর্থরাশি জমা দেন তা দেওয়া হয় টাকা তুলতে আসা লোকজনকে৷ এতেই অধিকাংশ ব্যাঙ্কে চাহিদার সিংহভাগ মিটে যায়৷ এ ছাড়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকেও টাকা আসে প্রতিটি শাখায়৷ কিন্তু এখন যে টাকা জমা পড়ছে তা একশো শতাংশ পাঁচশো বা হাজারের নোট৷ সেই টাকা তো গ্রাহকদের আর দেওয়া যাচ্ছে না৷ সে সবই বাতিল৷ হাতে রইল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জোগান৷ যা আগের চেয়ে গত তিনদিন অনেক বেড়েছে ঠিকই কিন্তু তা-ও যেন সিন্ধুতে বিন্দু৷ ফলে বিপদে-আপদে বা আকালের সময় মানুষ যেমন আগু-পিছু না ভেবে কষ্টার্জিত পুঁজিতে হাত দেয় তেমনই ব্যাঙ্কও হাঁটছে সেই রাস্তায়৷ সেটা কী? ব্যাঙ্কের পরিভাষায় ‘নন ইস্যুয়েবল নোট’৷ আম আদমির কথায় ছেঁড়া-ফাটা টাকা৷ যা বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বা এজেণ্টদের হাতে তুলে দিয়ে বদলে নিয়েছিলেন মানুষ৷ বাক্সবন্দি সেই টাকা এবার কিছুটা ঝাড়াই বাছাই করে ব্যাঙ্ক তুলে দিচ্ছে লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের হাতে৷ বাতিলের বদলি আর এক বাতিল! তাই সই৷ এছাড়া উপায় কী?
এদিকে নোট সঙ্কটে চা বাগানে মজুরি নিয়ে জটিলতা কাটাতে উদ্যোগী হল রাজ্য৷ রবিবার এক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ট্রেজারির মাধ্যমে মজুরি মিলবে৷ তবে অন্যান্য অসংগঠিত ক্ষেত্রে সমস্যা মেটেনি৷ ব্যাঙ্কে টাকার জোগান স্বাভাবিক না হলে অস্থিরতা কাটবে না বলেই শিল্পমহলের অভিমত৷ ধীরে ধীরে সমস্যা মিটবে বলে দাবি ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কিং অ্যাসোসিয়েশনের৷ কিন্তু এই ধীর গতির পরিষেবায় কতদিন পর গতি আসবে তার উত্তর মেলা এখন একশোর নোট পাওয়ার চেয়েও দুষ্কর৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.