মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: মুম্বই, দিল্লি-সহ অন্য জায়গা থেকে প্রায় রোজই আসছে শ্রমিকের দল। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর এই পরিযায়ী শ্রমিকরা ঠিকমতো হোম কোয়ারানটাইনের নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ। আবার কেউ বাড়ি ফিরে কোনও চিকিৎসা না করেই ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে থাকছেন। অথচ তাঁদের পরিবারের লোকেরা সকলের সঙ্গেই মিশছেন। বারণ করলেও কথা শুনছেন না। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং এক্ষেত্রে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে পথ অবরোধ করলেন বাকসী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শতাধিক বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমবি মোডের কাছে তাঁরা কয়েক ঘণ্টা পর অবরোধ করে রাখেন। অবরোধকারীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে। এর জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বাগনান ১ ব্লকের বাগনান-বাকসী রোড। পরে বাগনান থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়দের অভিযোগ দিন কয়েক আগে মহারাষ্ট্র থেকে কয়েকজন শ্রমিক আসেন। তাঁরা কোনওরকম ডাক্তারি পরীক্ষা না করেই বাড়িতে এসে লুকিয়ে রয়েছেন। বারবার বললেও তাঁরা কথা শুনছে না বলেও অভিযোগ। তাই এদিন পথ অবরোধ করেছেন বলে জানান স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকরা ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া কোনওভাবেই যেন সরাসরি বাড়ি না ঢুকে পড়েন।
প্রসঙ্গত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্কে লকডাউনের জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েন লক্ষ্য লক্ষ্য পরিযায়ী শ্রমিক। বাংলার ও হাজার হাজার শ্রমিক আটকে পড়ে অন্য রাজ্যে। নানা উপায়ে অন্য রাজ্য থেকে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে আসতে থাকেন। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ সাইকেল চেপে, কেউ কোনও লরিতে চেপে ফিরতে থাকেন। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বোঝাপড়ার মাধ্যমে হাওড়ায় ঢুকেছে একের পর এক পরিযায়ী শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন। এই ট্রেনের বেশিরভাগই এসেছে মুম্বই এবং দক্ষিণ ভারত থেকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় নিজেদের বাড়ি ফিরতেই তাঁদের পাঠানো হয়েছে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টাইনে। অনেককে আবার হোম কোয়রেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা হোম কোয়রেন্টাইনে থাকার নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ। ফলে বিভিন্ন এলাকার লোকেদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। জানা গিয়েছে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বেশিরভাগের বাড়ি হাওড়া শ্যামপুর, বাগনান, উলবেড়িয়া, পাঁচলা এবং ডোমজুড়ে। এইসব পরিযায়ী শ্রমিকরা সোনা বা হীরার অলংকার তৈরি, জরির কাজ অথবা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
এদিকে আবার পরিযায়ী শমিকদের মধ্যে হু হু করে করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছ। এতে স্বাস্থ্য দপ্তরের কপালে রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সম্প্রতি হাওড়া গ্রামীণ এলাকার ১৪৪ জন পরিযায়ী শ্রমিকের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয় ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। কয়েকদিন আগে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হাতে রিপোর্ট আসে। তাতে জানা যায় ওদের মধ্যে ৬৮ জন করোনা পজিটিভ। জেলায় মোট করোনা পজিটিভ পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৮৩। তাদের ভরতি করা হয়েছে উলুবেরিয়া ইএসআই হাসপাতাল এবং অন্য হাসপাতলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.