সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: পুলিশের সামনেই প্রতিদিন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল দুর্গাপুরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাতুরিয়া অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি লৌহ-ইস্পাত কারখানা। সংগঠিতভাবে দিনের পর দিন চুরি হচ্ছিল বন্ধ কারখানায়। দিনের আলোয় কারখানার মূল্যবান যন্ত্রাংশ নিয়ে পালাত চোরের দল। মাঝেমধ্যেই স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধ বাধলেও, তাদের কাজ থামেনি৷ কিন্তু রবিবার ঘটল বিপত্তি৷ রবিবার চুরি করতে কারখানায় ঢুকে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ঝলসে গেল এক লোহা চোর।
[ আরও পড়ুন: ফিল্মি কায়দায় হোটেল থেকে অপহরণ, ফাঁদ পেতে ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করল পুলিশ ]
জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে বন্ধ হয়ে যায় ওই কারখানাটি। বহু শ্রমিকের বকেয়া রেখেই পালায় কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া ঘোষণা করে কারখানার দখল নেয় ব্যাংক। স্থানীয়দের অভিযোগ, এরপর থেকেই শুরু হয়েছে লুঠতরাজ। সম্প্রতি সেই লুঠ সংগঠিতভাবে প্রকাশ্যে দিনের আলোতেই হত৷ কারখানার সামনে রয়েছে পুলিশের প্রহরা। কিন্তু ভিতরে শিবির করে রাতদিন লোহা কাটত দুষ্কৃতীরা। তারপর পিছনের দিকের পাঁচিল ভেঙে পাচার হত সেই লোহা। শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের মদতেই চলত সেই লুঠের সাম্রাজ্য। দুর্গাপুরের মায়াবাজারের শরবন চৌধুরি ও তার দলবলই এই কারখানা সাফের কাজ করে৷ এই চুরিকে কেন্দ্র করে এলাকায় বেড়েছিল দুষ্কৃতী তাণ্ডব৷ দিন কয়েক আগেও রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এলাকা৷ পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুষ্কৃতীরাজ খতমের দাবিতে স্থানীয়রা কারখানার গেটে বিক্ষোভও দেখান এলাকাবাসী। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির বদল হয়নি।
[ আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীকে গুলি করে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই, ছুটির দুপুরে চাঞ্চল্য খড়গপুরে ]
পুলিশ সূত্রে খবর, দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে আশেপাশের এলাকার জনা পঞ্চাশ শিশুকে দিয়ে এই যন্ত্রাংশ সাফের কাজ চালাচ্ছে মাফিয়ারা। এই ব্যাপারে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়াল বলেন, “এ কাজ করে কারা, কী পাচ্ছে, তা জানি না। কিন্তু যেটা হচ্ছে সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। শিল্পের পক্ষে শুভ নয়।” রবিবার এই কারখানায় চুরি করতে এসে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ঝলসে যান অর্জুনপুরের বাসিন্দা বছর তিরিশের অজয় বাউরি৷ পরে কাঁকসার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভরতি করা হয় তাকে। পুলিশের সামনেই এমন অবাধে লুঠপাট নিয়ে ক্ষুব্ধ ৪ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসন কি ঘুমাচ্ছে? তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” এই বিষয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি–১ (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা জানান, “আমাদের পাহারা থাকে। বেশ কিছু দুষ্কৃতীকে ধরাও হয়েছে। আরও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।”
ছবি: উদয়ন গুহরায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.